Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাবাকে নিয়ে শিক্ষকদের মন্তব্য, শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ জানুয়ারি ২০২২ ২১:০১

রাজশাহী: জন্মদাতা বাবা নিয়ে শিক্ষকদের ‘অশালীন’ মন্তবের জের ধরে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এক শিক্ষার্থী। ঘটনাটি রাজশাহী হাজী আবুল হোসেন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আর-হাবিট)।

রাজশাহী নগরীর ওমরপুর এলাকায় টাঙ্গাইল থেকে পরিচালিত বেসরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির রাজশাহী শাখার ক্যাম্পাস। এর অধ্যক্ষ থাকেন টাঙ্গাইলে। রাজশাহী দায়িত্বে রয়েছেন উপ-উপাধাক্ষ্য।

আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই শিক্ষার্থীর নাম রাফিউল ইসলাম রাফি (১৮)। তিনি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার বিভাগের দ্বিতীয় পর্বের শিক্ষার্থী। তিনি পুঠিয়া উপজেলার কান্দ্রা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা রবিউল ইসলাম কান্দ্রা দাখিল মাদরাসার শিক্ষক।

রাফি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাতে রাফিকে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীর থেকে কীটনাশক বের করা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়।

কীটনাশক পানের আগে রাফিউল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষকেরা শুধু তাকেই নয়, তার মা-বাবাকেও অপমান করে কথা বলেছেন। দুই মাস ধরেই শিক্ষকেরা তাকে অপমান করে আসছিলেন। এসব তিনি সহ্য করতে পারছেন না। তাই ‘এই জীবনকে বিদায় দিলাম’ বলে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন রাফিউল ইসলাম।

রাফির বাবা রবিউল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আর-হাবিটে বার্ষিক মিটিংয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে পড়ার মানন্নোয়নের দাবি করেছিল রাফি। তার কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েকজন শিক্ষক সবার সামনে আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে অপমান করেন এবং অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করেন।

রবিউল ইসলাম আরও বলেন, সবার সামনে এমন অপমান করায় তা সইতে না পেরে রোববার (৯ জানুয়ারি) এয়ারপোর্ট রোডের নওদাপাড়ায় প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন মেসে ফিরে রাফি বিষপান করে। এরপর তাকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে সোমবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাফির বাবা বলেন, সে (রাফি) ছোটবেলা থেকেই স্পষ্টভাষী। হয়তো সমস্যার কথা জানতে চেয়েছে, তাই বলেছে। সে বলেছিল, ‘আমার বাবা প্রত্যেক সেমিস্টারে কষ্ট করে টাকা দেয়। তাদের কষ্টের টাকায় এখানে পড়তে এসেছি। তাই আমাকে একটু ভালোভাবে ক্লাস নেন ও পড়ালেখার মানন্নোয়ন করেন।’ এসব বলা কি তার অপরাধ? সে ছাত্র হিসেবেও ভালো। দুই সেমিস্টারেই ফার্স্ট হয়েছে। পড়ার মান ভালো চাওয়াটাই কি তার অপরাধ ছিল?

আইনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না— জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম বলেন, এখন ছেলের সুস্থতা নিয়ে চিন্তিত। বিপদ এখনো কাটেনি। কোনো অঘটন ঘটলে বা ছেলের কিছু হলে সেটি দেখা যাবে। এখন শুধু ছেলের সুস্থতা কামনা করছি।

আর-হাবিটের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কেউ একদিন ক্লাসে না গেলে শ্রেণিশিক্ষকরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন। আর-হাবিটের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয় বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ডিসেম্বরে আমি মায়ের অসুস্থতার কারণে দুই দিন ক্লাসে যেতে পারিনি। শ্রেণিশিক্ষক আমার বাবাকে কল দিয়ে অপমানজনক কথা বলেছেন। পরে বলেছেন, আমাকে আর-হাবিট থেকে বহিষ্কার করা হবে। তাই বাধ্য ক্যাম্পাসে গিয়ে ওই শিক্ষককের আরও অপমানজনক কথা শুনতে হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে উপাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মঙ্গলবার সকাল থেকে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের নম্বরে কল করে এবং এসএমএস দিয়েও সাড়া মেলেনি।

সারাবাংলা/টিআর

আর-হাবিট শিক্ষকের কটূক্তি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাচেষ্টা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর