ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেওয়ার নির্দেশনা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্যে ট্রেনে ভাড়া না বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করার বিষয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। বৈঠকে জনস্বার্থ বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান সারাবাংলাকে বলেন, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জন্য ১১টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এক্ষেত্রে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশনা কীভাবে কার্যকর করা হবে, সেটি নিয়েই আমরা আগামীকাল (বুধবার) পরিবহন মালিকদের সঙ্গে ব্ঠৈকে বসব।
তিনি বলেন, বৈঠকে পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের ভ্যাকসিন কীভাবে দ্রুত দেওয়া সম্ভব হতে পারে, সেটি নিয়েও আলোচনা হবে। একইসঙ্গে কীভাবে সবাই মিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হবে।
বৈঠকে বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে কি না— জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট এজেন্ডা এখন পর্যন্ত নেই। বিআরটিএ যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে জনস্বার্থ বিবেচনা করবে।
তবে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করা হবে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ। একইসঙ্গে পরিবহনের চালক ও সহকারীদের ভ্যাকসিন দেওয়া বিষয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে বলেও জানান তিনি।
সরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকায় অর্ধেক যাত্রী বহন করলে তুলনামূলকভাবে বেশি গাড়ির প্রয়োজন হতে পারে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, আগে আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ দেশকে নিরাপদ করতে হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই। আবার বললেই রাতারাতি গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে ফেলা সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়টি কীভাবে সমন্বয় করে সরকারি নির্দেশনা পালন করা যায়, সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহও সারাবাংলাকে বলেন, সরকারিভাবে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেটি নিয়ে আগামীকাল (বুধবার) বিআরটিএ’র সঙ্গে বৈঠক আছে। এরপরেই আসলে আমরা সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।
ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আগে যখন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তখন ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে যদি বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আমরা আলোচনাসাপেক্ষে আগের মতো করেই গাড়ি চালাতে পারি। কারণ অর্ধেক যাত্রী নিতে হলে বাস ভাড়া যৌক্তিকভাবে বাড়াতেই হবে। তা না হলে মালিকেরা ড্রাইভার-হেলপারদের বেতন দেবে কীভাবে? মালিকরা তো ভর্তুকি দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবে না।
সব অফিস-আদালত খোলা থাকায় গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হলে দূরপাল্লার বাসে সমস্যা না হলেও নগর পরিবহনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলেও মনে করছেন এনায়েত উল্ল্যাহ।
পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের ভ্যাকসিন বিষয়ে এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩৫ শতাংশ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এর মাঝে দেখা যাচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি শ্রমিকের এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন গ্রহনের জন্য নিবন্ধনই করা হয়নি। সেক্ষেত্রে আসলে কীভাবে বাসচালক ও শ্রমিকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়, সেটি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। প্রয়োজনে বাস টার্মিনালেই রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।