Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভোট চুরির’ ষড়যন্ত্রে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: আমীর খসরু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৪৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ আবারও আগামী নির্বাচনে ‘ভোট চুরির’ ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে; যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়ে সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার সিডিএ দক্ষিণ আবাসিক মাঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দেশে-বিদেশ নাকি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি বলতে চাই, আসল ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগ। তারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এদেশের মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে দলীয়করণের মাধ্যমে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা আগামী নির্বাচনে আবার ভোট চুরির ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’

‘আলোচনার মাধ্যমে সব ভোটচোররা আজ এক জায়গায় যুক্ত হয়েছে। তারা আবার ভোটচুরির জন্য নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ষড়যন্ত্রে চুরির ভাগিদাররা, যারা অতীতেও চুরির ভাগ নিয়েছে, তারা আবার চুরির ভাগের জন্য ঘুর ঘুর করছে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে। তারা বাংলাদেশের আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

ষড়যন্ত্রে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের ষড়যন্ত্রকে ধ্বংস করে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ আজ একতাবদ্ধ হয়েছে, সেই ষড়যন্ত্রকে চুরমার করে দেবে। মানুষের যে জোয়ার শুরু হয়েছে, আগামীদিনে বাংলাদেশের মানুষ সেই ষড়যন্ত্রকারীদের ধ্বংস করে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যারা যারা ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়ে সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

বাংলাদেশে কী ঘটছে, সেগুলো দেশে এবং দেশের বাইরে আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে- এমন মন্তব্য করে খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে মধ্যরাতে ভোটচুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে সেটা সবাই জেনে গেছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে তারা যে ক্ষমতায় টিকে আছে, সেটা বিশ্বব্যাপী দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমেরিকায় কংগ্রেস-সিনেটে দুই দলের সদস্যরা, বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো, আমেরিকার মানবাধিকার গ্রুপগুলো- সবাই একসঙ্গে মার্কিন সরকারকে বলেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।’

সরকার বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে- এমন তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশে যে আকাম-কুকাম করছে, সেটা ঢাকার জন্য বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা গুম করছে, খুন করছে, হত্যা করছে। আবার তাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এর হিসাব তাদের একদিন দিতে হবে।’

কোভিডের ওমিক্রণ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয় উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘ওমিক্রন নয়, আসল রোগ অন্য জায়গায়। রোগ হচ্ছে- সরকার পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। ওমিক্রনের নাম দিয়ে ১৫/২০ দিন পতন ঠেকাতে পারবেন, না হলে বড় জোড় একমাস ঠেকাতে পারবেন। পতন কিন্তু হবেই হবে। এই যে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছে, কোনো শক্তি একে রুখতে পারবে না। ধানাইপানাই করে কোনো লাভ হবে না। ১৪৪ ধারায় কোনো কাজ হবে না। ১৪৪ ধারার দিন শেষ হয়ে গেছে। অনুমতি দিয়ে জনসভা করার দিনও শেষ হয়ে গেছে। এই বাধ ভাঙ্গা জোয়ার রুখার কারও কোনো শক্তি নেই। ডান-বাম কিছু নেই, সমস্ত বাংলাদেশ আজ ঐকব্যদ্ধ।’

ব্যাপক জনসমাগমের কারণে সমাবেশের মঞ্চ একপর্যায়ে ভেঙ্গে পড়ে। ভাঙ্গা মঞ্চে দাঁড়িয়েই নেতারা বক্তব্য সারেন। বিষয়টি উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘জনগণের চাপে মঞ্চ ভেঙে যাবে, কিন্তু আন্দোলন বন্ধ হবে না। মঞ্চ তো ভাঙবেই, হাজার হাজার জনতার চাপ। এক মঞ্চ ভাঙবে, অনেক মঞ্চ ভাঙবে, কিন্তু আন্দোলন বন্ধ হবে না। ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখনি। আজ দক্ষিণ জেলায় স্যাম্পল দেখিয়েছি। সামনে চট্টগ্রাম শহরে দেখাব, চট্টগ্রাম বিভাগে দেখাব, সারাদেশে দেখাব।’

বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা হচ্ছে বলে শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা পরামর্শ দিই- আপনারা আওয়ামী লীগের যে গুটিকয়েক সমর্থক আছেন, তাদের তালিকা করুন। আর বাদবাকি সব বিএনপি। এত কষ্ট করার তো দরকার নেই। আওয়ামী লীগে এখন কোনো রাজনীতিবিদ নেই। লুটপাটে যারা জড়িত, তারা ছাড়া আওয়ামী লীগে এখন আর কেউ নেই। এর বাইরে সবাই এখন বিএনপি।’

খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না, মুক্ত আমরা করব। কার কাছে মুক্তি চাইব? একটা অবৈধ, অনির্বাচিত, দুর্নীতিবাজ, দালাল সরকারের কাছে? খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব আন্দোলনের মাধ্যমে। এই অবৈধ, অনির্বাচিত সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা চাইতে পারি না। আগে তাদের পতন ঘটাতে হবে। পতনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।’

বিএনপি আজ অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে দলটির অন্যতম নীতিনির্ধারক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গুম-খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুড়ে পুড়ে আজ খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন- টেক ব্যাক বাংলাদেশ। নেতাকর্মীদের বলব- বাংলাদেশকে উদ্ধার কর। বাংলাদেশের আত্মাকে মুক্ত করে দাও। যারা বাংলাদেশের আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে তাদের মূল্য দিতে হবে আগামীদিনে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান ও সদস্য এস এম মামুন মিয়ার যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, দক্ষিণ জেলার সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, হারুনুর রশীদ।

এছাড়া সাবেক সাংসদ গাজী শাহজাহান জুয়েল, সরওয়ার জামাল নিজাম, দক্ষিণ জেলার নেতা এনামুল হক এনাম, মোশারফ হোসেন, ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সভাপতি আশরাফুল আলম লিংকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সাব্বিরও বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন বিএনপি নেতা সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজাম। তিনি মঞ্চের দিকে যাবার সময় বিএনপির কিছু কর্মী কটূক্তি করে স্লোগান দেন। এ সময় দু’পক্ষে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়। একদল কর্মী সরওয়ার জামাল নিজামকে লাঞ্ছিত করেন।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরওয়ার জামাল সাহেব মঞ্চের দিকে যাওয়ার সময় উনার লোকজনের সঙ্গে নির্বাচনি এলাকা আনোয়ারার প্রতিপক্ষ এক নেতার কর্মীদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। সাবেক এমপি সাহেবকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে অবশ্য সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মারামারিতে সরওয়ার জামাল সাহেবের সঙ্গে আসা বিএনপির কর্মী জসীম উদ্দিন আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

জড়িত টপ নিউজ ভোট চুরি ভোটচুরি ষড়যন্ত্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর