পেঁয়াজ-মরিচের বস্তায় পাথর, পাইকারদের দুষছেন বিক্রেতারা
১৩ জানুয়ারি ২০২২ ১০:২৩
কক্সবাজার: জেলা শহরের গোলদিঘির পাড় এলাকায় ছোট্ট মুদির দোকান ‘সায়মা স্টোর’র মালিক জিয়াবুর রহমান বড়বাজারের পাইকারি দোকান ‘ইসমাইল ট্রেডাস’ থেকে ২৫ কেজি ওজনের দুটি পেঁয়াজের বস্তা কিনেন। বস্তার ওপরে ঠিক থাকলেও নীচের অংশে পেঁয়াজের সঙ্গে রয়েছে বড় বড় পাথর। একটা-দুইটা নয়, দুই বস্তাতে ছিল প্রায় ৯ কেজি পাথর। পরে ওই পাইকারি দোকানের মালিক আলী হোসাইন সওদাগরকে বিষয়টি জানান তিনি।
আলী হোসাইন সওদাগর প্রথমে দোষ চাপান চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রেতাদের ওপর। অথাৎ যাদের কাছ থেকে তিনি প্রাইকারিতে ট্রাকভর্তি মাল কিনেছেন। পরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাথরের ওজনের পরিমাণ পিয়াজ দেওয়া হয় সায়মা স্টোরকে। গত সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে এমন’ই অভিযোগ করেন দোকানের মালিক জিয়াবুর রহমান।
পেঁয়াজের বস্তায় পাথরের বিষয়ে আালী হোসাইন সওদাগর এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই প্রতারণায় তিনি নিজেও পড়েছেন। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে ট্রাকে ট্রাকে মাল আনেন। আর এই বস্তাগুলোতেই মালের সঙ্গে পাথর রয়েছে। তার আড়ত ‘ইসলাম ট্রেডার্স’এ প্রায় ৩০ কেজি পাথর জমা রয়েছে।’
এই ঘটনার সূত্র ধরে আশপাশের আরও কয়েকটি মুদির দোকানে যাচাই করা হয়। দেখা যায়, শহরের বৈদ্যঘোনার মুদির দোকান ‘মায়ের দোয়া স্টোর’এ একই চিত্র। ওই দোকানে পেঁয়াজের পাশাপাশি ছোলা এবং রসুদের বস্তায়ও পাথর পাওয়া যায়। আর এসব পাথর ছোট বা স্বাভাবিক নয়। দেখেই বুঝা যায় পাথরগুলো পরিকল্পিতভাবে দেওয়া হয়েছে ওজর বাড়ানো জন্য।
শহরের বড় বাজারের বড় মুদির দোকান ‘ভাই-ভাই স্টোর’ এ গিয়ে দেখা যায় তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। ওই স্টোরের মালিক মোহাম্মদ আলমঙ্গীর হোসাইন জানান, গেল রমজানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজার থেকে মাল কিনে বড় ধরা খেয়েছিলেন। ওই সময় একসঙ্গে ৭০ বস্তা ডাল, পেঁয়াজ, মরিচ ও ছোলা কিনেছিলেন। এসব বস্তায় প্রায় ৫০ কেজির ওপরে পাথর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে খাতুনগঞ্জের পাইকারী বিক্রয় কেন্দ্র ‘রায়হান ট্রেডার্স’র মালিক মো. রায়হানকে ক্ষতির বিষয়টি জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ওই সময় তিনি বলেছিলেন- তারা পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার, ভারত ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মাল আমদানি করে। ওখানেই হয়ত এমটা হয়েছে। তাই কিছু করার নাই।
যদিও এই কথা মেনে নিতে রাজি না ক্ষতিগ্রস্থ মোহাম্মদ আলমঙ্গীর হোসাইন। তিনি বলেন, এই প্রতারণা খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকেই করা হয়েছে।
বড়বাজারের পাইকারী বিক্রেতা ‘মেসার্স বিবেকানন্দ স্টোর’র মালিক জানান, বস্তার মধ্যে পাথর থাকার বিষয় আগেও শুনেছেন। তবে এর জন্য তারা দায়ী নয়। চট্টগ্রাম থেকে শত শত বস্তা মাল ট্রাকে করে আসে। ওই বস্তগুলো একটা করে খোলার সুযোগ নাই। সুতরাং বস্তায় পাথর থাকার বিষয়টি তিনি অবগত নয়।
বড় বাজারের আরেক পাইকারী বিক্রেতা ‘মেসার্স আকাশ বানিজ্যালয়’র স্বত্বাধিকারী রাখাল দাশ জানান, তাদের শত শত বস্তা মাল বিক্রি হয়। সুতরাং এই হিসাব তাদের থাকে না। এছাড়া তারা শুধু চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ থেকে নয় পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও তুরস্থ থেকেও মাল আমদানি করেন। কোথায় কিভাবে বস্তায় পাথর ডুকছে তা তাদের জানা নেই।
ভোগ্যপন্ন দোকান মালিক সমিতি’র সভাপতি মোস্তাক আহম্মদ জানান, ‘এই বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রতারণা। আড়তদাররা যতই অস্বীকার করুকনা কেন, তারা মূলত সিন্ডিকেট করে এই অপকর্ম করছে। তারা সু-কৌশলে খুচড়া বিক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে আমদানির সময় যদি বস্তায় পাথর থাকত তাহলে নিশ্চিয় পাইকারী বিক্রেতারা প্রতিবাদ করত। অথবা ব্যবস্থা নিত। কিন্তু তারা বরাবরই চুপচাপ রয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় পাইকারী ব্যবসার মাফিয়ারা সিন্ডিকেট করেই এই অপকর্ম করছে। এতে সাধারণ ক্রেতাদের তেমন ক্ষতি না হলেও খুচড়া বিক্রেতাদের ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকে অবৈধ পথ অবলম্বর করে দ্রব্যের দামও বাড়িতে নিতে পারে। যেটি চলমান বাজার পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সচেতন মহলের দাবি, বাজার মনিটরিং বা প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে মূল অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সিন্টিকেটটি ভেঙ্গে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হোক।
সারাবাংলা/এনএস