Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগেও জেল খেটেছি, তারপরও রোগীকে অপারেশন করবই: অভিযুক্ত চিকিৎসক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:০৭

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে একতা নার্সিং হোমে চিকিৎসা নিতে আসা এক মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনদের দাবি।

রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী জানান— সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়নের খলিশাকুড়ী গ্রামের মকলেশ উদ্দিনের প্রসুতি স্ত্রী নাসিমা বেগম (৩০) কে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে শহরের একতা নার্সিং হোম ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের পরামর্শে চিকিৎসক জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে অপারেশেন করানো হয়। অপারেশনের সময় চিকিৎসকের ভুলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে চিকিৎসক পালিয়ে যান। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ উপায় না পেয়ে রোগীকে দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্সে অন্যত্র পাঠাতে চাইলে রোগী ও নবজাতকটি মারা যায়।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনার পর স্থানীয়রা ক্লিনিক ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানালে কৌশলে সবাই পালিয়ে যায়। এতে নিরুপায় হয়ে পড়ে রোগীর স্বজনরা। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় নেতা, সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যান ও রোগীর স্বজনদের নিয়ে বৈঠক বসে। এতে রোগীর স্বজনরা মোটা অংকের টাকা দাবি করে। একপর্যায় বাকবিতণ্ডা বাঁধে। এতে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের ভাড়া করা কিছু লোকজন তাদেরকে বের করিয়ে দেয়।

শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লার তাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা গ্রাম থেকে শহরে চিকিৎসা নিতে এসেছে ক্লিনিকে। তাই বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ধরনের ব্যবহার করাটা ঠিক হয়নি।’

সুরাহা ছাড়াই মা ও শিশুর লাশ নিয়ে বাড়িতে যান স্বজনরা। এমন মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক প্রতিবাদের ঝড় বইতে শুরু করে। তবুও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে নিহতের মা আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আমার মেয়ে নাছিমা খাতুনকে শহরের একতা নার্সিং হোম ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। এরপর চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম আমার মেয়ের সিজারিয়ান অপারেশন করেন। সিজারের পরে ডাক্তার জানান শিশু সন্তানটি মারা গেছে। এ কথা শুনে অমরা সবাই আমার মেয়েকে দেখতে চাইলে নার্সরা আমাদের দেখা করতে যেতে দেয়নি।’

অন্যদিকে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার মেয়েকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। এরপর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একটি অ্যাম্বুলেন্সে আমার মেয়েকে রেখে পালিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়।’

একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা মা কান্না জড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘আমার মেয়ের সুচিকিৎসা হয়নি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ বিষয়ে নিহতের ফুপাতো ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে আনার সময় আমার বোন একদম সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। এখানকার ডাক্তাররা তার ভালো চিকিৎসা দিতে পারেনি। সে কারণে আমার বোন মারা গেছেন।’

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, এমবিবিএস ডাক্তার না হলেও তিনি পিএইচডি করেছেন দাবি করে জাহাঙ্গীর দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন চালিয়ে আসলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর সে কারণে দু’বছরে জেলার সুশ্রী নাসিং হোম, সেভেন ডে ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করাতে গিয়ে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অপারেশন ভালো হয়েছে। রোগীর অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল। পত্রিকায় রিপোর্ট করে কী হবে। এর আগে আমি জেলও খেটেছি তার পরেও আমি অপারেশন করবই।’

তবে তিনি তার বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে রাজি হননি।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে শীর্ষ কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ জানান, জাহাঙ্গীরের ভুল অপারেশনে বেশকয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। থানায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল জেলও খেটেছিল শুনেছি। আমি এ জেলায় নতুন তার বৈধ কাগজপত্র আছে কি না খতিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিন্ধান্তে করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/একে

একতা ক্লিনিক ঠাকুরগাঁও ডা. জাহাঙ্গীর মা ও নবজাতকের মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর