অবৈধ ছাপাখানায় বিখ্যাত লেখকদের নকল বই
১০ এপ্রিল ২০১৮ ২২:৩৪ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ২২:৩৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: কবি কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবালসহ বিখ্যাত ও জনপ্রিয় অনেক লেখকের বই অনুমোদন ছাড়াই ছাপানো হচ্ছে রাজধানীতে গড়ে ওঠা অবৈধ ছাপাখানায়।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক বই কারাগারের রোজনামচাও বাদ যায়নি এই তালিকা থেকে।
মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর ওয়ারীর ইত্তেফাক মোড় এলাকার ৫২ নম্বর টিনশেট বাসায় খোঁজ পাওয়া এই নকল ছাপাখানায় অভিযান চালায় পুলিশ।
প্রায় দুইঘণ্টা ধরে চলা এই অভিযানে অন্যপ্রকাশ, আগামী, সময়, পার্ল, মাওলা ব্রাদার্সের মতো বড় বড় প্রকাশনীতে ছাপানো সকল বই জব্দ করে পুলিশ। এ সময় কারখানাটির মালিকের ছেলে মাহবুব আলমকে আটক করে পুলিশ।
ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক শাহ আলম সারাবাংলাকে বলেন, আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি গোপনীয়ভাবে এই কারখানা তৈরি করেন। যার কোনো ট্রেড লাইসেন্স বা জেলা প্রশাসকের অনুমতি (ডিকলারেশন) নেই।
শাহ আলম বলেন, অন্য প্রকাশের ম্যানেজার মোকসেদুর রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই নকল ছাপাখানায় অভিযান চালায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নামকরা এসব প্রকাশনীগুলো ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে বই ছাপালেও নকল কারখানায় বই ছাপানোর কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। তাই কপিরাইট আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। মামলায় মালিক রাজ্জাক খান ও তার ছেলে মাহবুব আলমকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
মালিকের ছেলে মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, দেড় বছর হলো এই ছাপাখানা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতি না পাওয়ায় ট্রেড লাইসেন্স করা হয়নি। মেশিন বসানোয় বিভিন্ন ব্রান্ডের বই ছাপিয়ে বিক্রি করা হয়। ছাপা হওয়া এসব বই রংপুর, পটুয়াখালী, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা অন্যপ্রকাশের ম্যানেজার মোকসেদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, তাদের বাংলাবাজার অফিসে গিয়ে এক যুবক জানায়, ইত্তেফাক মোড়ের এই জায়গায় নকল বই ছাপানো হয়। তার তথ্যের ভিত্তিতেই বই ছাপানোর কথা বলে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করলে তারা দেখতে পান, বড় বড় প্রকাশনীর বই ছাপানো হচ্ছে। এরপরই তারা অবৈধভাবে বই ছাপানোর বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেন। নামি-দামি লেখকদের বই নিম্নমানের কালি-কাগজে ছাপিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। ক্রেতাতের কাছে এসব নকল বই বিক্রি হয় আসল প্রকাশনীর বইয়ের দামেই।
অনুমোদনহীন এই ছাপাখানায় প্রিন্টিং মেশিনে কাজ করেন ২০ বছরের তরুণ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নিম্নমানের কাগজ ও কাভার দিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনীর বই ছাপানো হয়। এসব বই কম দামে দেশের বিভিন্ন লাইব্রেরীতে পাঠানো হয়। প্রতিদিন দেশের অনেক জেলাতেই এসব বই যায়। নকল কারখানাটির বাড়ি ভাড়া ৫০ হাজার টাকা আর তার বেতন আট হাজার টাকা বলে জানান এই তরুণ।
সারাবাংলা/ইউজে/ জেডএফ