পুলিশের লাঠিচার্জে পণ্ড হলো চাকরিপ্রত্যাশীদের অবরোধ
১৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:২৭
ঢাকা: সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে নীলক্ষেত চৌরাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ লাঠিচার্জে কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আন্দোলনকারীরা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন। এতে আশেপাশের রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধের পরও আন্দোলনকারীরা রাস্তা না ছাড়লে দুপুর ১টার দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়।
বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধিসহ নিয়োগ পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশ, চাকরিতে আবেদনের ফি সর্বোচ্চ ১০০ টাকা, একই সময়ে একাধিকবার নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার ব্যবস্থার দাবিতে ওই অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিলেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় তারা তাদের দাবির পক্ষে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়া তারা ‘ভেঙে ফেল বয়সের শৃঙ্খল আয়রে সব তরুণ দল’, ‘শেখ হাসিনার সরকার বয়স বৃদ্ধি দরকার’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মুজিববর্ষের উপহার বয়স বৃদ্ধি দরকার’, ‘ছাত্র সমাজের দাবি বয়স বৃদ্ধি’, ‘তারুণ্যকে বয়সের ফ্রেমে বেঁধে রাখা যায় না’, ‘২১ মাসের প্রহসন মানি না, মানব না’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, গত বছরের ১৯ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘ব্যাকডেট’র মাধ্যমে বয়স ছাড়ের প্রজ্ঞাপনকে প্রহসনমূলক অ্যাখ্যা দেন। এটি সব চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক বলে তারা মনে করেন।
আন্দোলনকারীরা জানান- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যাকডেট দিয়ে বয়স সমন্বয় করায় শুধুমাত্র যাদের বয়স ৩০+ শুধু তারাই উপকৃত হচ্ছেন। ২১ মাসের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ৪ মাস। কারণ ব্যাকডেটের বয়স ২৫ মার্চ ২০২০ নির্ধারণ করে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মোট ২১ মাস সময় ধরা হলেও এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় অক্টোবর ২০২১ এবং কার্যকর হয় সেপ্টেম্বর ২০২১।
হাতেগোনা কয়েকটি বিজ্ঞপ্তিতে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির। ব্যাকডেট দেওয়ার মাধ্যমে সব বয়সী শিক্ষার্থী তথা চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলে আন্দোলনকারীরা মনে করেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি- চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা বাড়াতে হবে। গত দুই বছর করোনার থাবায় বিপর্যস্ত হয়েছে চাকরিপ্রার্থীরা। একদিকে শিক্ষা জীবন শেষ করতে সময় লাগে ২৮ বছর অন্যদিকে চাকরির সবশেষ বয়সসীমা ৩০ বছর। এতে অনেক চাকরিপ্রার্থী চাকরির জন্য তেমন প্রস্তুতি নিতে পারেন না।
চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে। এর আগে গঠিত কমিটি বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি সরকার। এরপর আরও কয়েক দফায় আন্দোলন চালানো হলেও তা কর্ণপাত করছে না কেউ।
আন্দোলনকারী আব্দুল্লাহ আল-মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক দাবি মাঠে নেমেছি। আশা করছি, সরকার আমাদের দাবিকে গুরুত্ব দেবে এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়াবে।’
নিউমার্কেট থানার এসআই কামরুজ্জামান খান বলেন, একদল চাকরিপ্রার্থী নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেয়। তারা চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছিল। এই সময় আশেপাশের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে।
আন্দোলনে চাকরিপ্রত্যাশীদের পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ওমর ফারুক, মানিক হোসেন রিপন, সাদেকুল মিলন, নিতাই সরকার, তাসলিমা লিমা তানভির হোসেন, আনোয়ার সার্কিন, ইমতিয়াজ হোসেন, ইবনে তানজির, এম এ আলী, অক্ষয় রায়, ফকির আল মামুন, শারমিন সুলতানা, সুমনা রহমান, মার্জিয়া মুন, সায়রা হক, সাজিদ রহমান, মইনুল হোসেনসহ অন্যরা।
ছবি: সুমিত আহমেদ, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট।
সারাবাংলা/ইউজে/একে