‘প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলা করে যাচ্ছি’
১৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:২৩
ঢাকা: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অনুপ্রেরণায় আমরা এখন পর্যন্ত করোনা এবং এর অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করে যাচ্ছি। তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন যাতে আমাদের দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সে জন্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) বছরের প্রথম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নিজের ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
আজকে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশন একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশ।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২২ সালের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
অধিবেশনের শুরুতেই সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারা স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এরপর শোকপ্রস্তাব আনা হয়। শোক প্রস্তাবের পর রাষ্ট্রপতি তার ভাষণ শুরু করেন।
আরও পড়ুন: সংসদে শোকপ্রস্তাব
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে বিগত দুবছর জনসাধারণের জীবন-জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হয়। এ সময়ে জীবন রক্ষার পাশাপাশি আর্থসামাজিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই ছিল সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর্থসামাজিক এ সংকট মোকাবিলায় সরকার ‘Whole of the Government Approach’ গ্রহণ করে। করোনা সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ ও প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ১৫৬টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষার জন্য ১৫১টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়।’
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত অর্থবছরের তুলনায় বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৩ শতাংশ। এরইমধ্যে প্রায় ৭ কোটির অধিক জনগণকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই দেশের অধিকাংশ জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ্। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পৃথিবীর অন্যান্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অনুপ্রেরণায় আমরা এখন পর্যন্ত করোনা এবং এর অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করে যাচ্ছি। তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েণ্ট ওমিক্রন যাতে আমাদের দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘করোনার কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ঝুঁকি বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সংকট মোকাবিলায় বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার দেশের আপামর জনসাধারণকে সুখ-স্বাচ্ছন্দে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রদত্ত ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ৬ কোটি ৭৪ লক্ষ ৬৩ হাজারের অধিক জনগণ এবং ১ লক্ষ ১৭ হাজারের অধিক প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে ইতিবাচক অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে, যা সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকসমূহ ও সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বিশ্লেষণে প্রতিফলিত হয়। করোনা মহামারি শুরুর পূর্বে ২০১৫-১৬ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪ শতাংশ, যা করোনাকালীন হ্রাস পায়। তবে সরকারের বিভিন্ন টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে নানামুখী আর্থসামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম গ্রহণের ফলে এরইমধ্যে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জিডিপির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির তুলনায় সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক চার-তিন শতাংশে, যা আশাব্যাঞ্জক।’
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের শুরুতে বলেন, ‘ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অমর শহিদকে, যাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে; আমি আরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের তিন মহান ব্যক্তিত্ব শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে।’
আরও পড়ুন: বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশন শুরু
এ ছাড়া ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে শাহাদত বরণ করেছিলেন তার সহধর্মিণী মহীয়সী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।
গত বছরের প্রসঙ্গে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০২১ সাল ছিল বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্মরণীয় বছর। এ বছরেই আমরা উদ্যাপন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। উৎসবের এমন মহামিলন, গণমানুষের এমন সম্মিলন ইতিহাসে কমই দেখা যায়। যদিও করোনা মহামারির কারণে উৎসব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো বাধাই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। সাড়ম্বরে দেশে ও দেশের বাইরে জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। এ সব অনুষ্ঠানে বন্ধু দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানের মর্যাদা ও আনন্দ-উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। এছাড়া অনেক বন্ধু দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও যোগাযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।’
করোনার মধ্যেও দেশের আর্থিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘করোনা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে ইতিবাচক অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে, যা সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকসমূহ ও সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বিশ্লেষণে প্রতিফলিত হয়। করোনা মহামারি শুরুর পূর্বে ২০১৫-১৬ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪ শতাংশ, যা করোনাকালীন হ্রাস পায়। তবে সরকারের বিভিন্ন টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে নানামুখী আর্থসামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জিডিপির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির তুলনায় সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক চার-তিন শতাংশে, যা আশাব্যাঞ্জক।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের রফতানি আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরেই রফতানি আয় ১৫.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ এবং নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য সময়োপযোগী এবং কার্যকর নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়াসহ আমদানি ও রফতানি সংক্রান্ত সব সেবা অটোমেশনের মাধ্যমে সহজ করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে