Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুপ্রিম কোর্টে টিএইচ খানের জানাজা সম্পন্ন, দাফন আগামীকাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:১২

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবীণ আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক বিচারপতি তাফাজ্জাল হোসেন (টিএইচ) খানের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) পৌনে ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাঙ্গণে মরহুম টিএইচ খানের জানাজা সম্পন্ন হয়।

টিএইচ খানের জানাজায় প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা এবং হাজারো আইনজীবী অংশ নেন।

জানাজার আগে মরহুমের বড় ছেলে সাবেক এমপি আফজাল এইচ খান বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান। এ সময় টিএইচ খানের জীবনী তুলে ধরে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল।

জানাজা শেষে মরহুমের প্রতি প্রধান বিচারপতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় , সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, ল’রিপোর্টার ফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এরপর সেখান থেকে টিএইচ খানের দ্বিতীয় জানাজা ঢাকার মোহাম্মদপুরে মরহুমের বাসার কাছের মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। পরে টিএইচ খানের লাশ আগামীকাল মঙ্গলবার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে হালুয়াঘাটে সকাল ১১টায় তৃতীয় জানাজা শেষে দুপুরে উনার লাশ নিজ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখানে বেলা আড়াইটায় চতুর্থ তথা শেষ জানাজা শেষ হওইয়ার পর টিএইচ খানের দাফন সম্পন্ন হবে।

এদিকে বিচারপতি টিএইচ খানের মৃত্যুতে শোক-শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আইনজীবী টিএইচ খান রোববার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

বিচারপতি টিএইচ খান ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট-ধোবাউরা আসন থেকে ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আইন ও বিচার, তথ্য ও বেতার, শিক্ষা, ভূমি, প্রশাসন, ধর্ম, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

টিএইচ খান ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪২ সালে তৎকালীন কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ (অনার্স) ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন।

১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। একই বছর ২৭ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সালেহ আকরামের নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারপতি নিয়ে ঢাকা হাইকোর্টের যাত্রা শুরু হয়, সেদিন থেকে বিচারপতি টিএইচ খান একজন আইনজীবী হিসেবে সেই আদালতে (বর্তমান সুপ্রিম কোর্টে) পদচারণা শুরু করেন। তিনি বিচারপতি টিএইচ খান নামে সমধিক পরিচিত হলেও তার প্রকৃত নাম মো. তাফাজ্জাল হোসেন খান।

১৯৬৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ১৯৭৩ সালের জুলাই থেকে আবার আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিম আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) সভাপতি নির্বাচিত হন।

বিচারপতি টিএইচ খান ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট-ধোবাউরা আসন থেকে ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন ও বিচার, তথ্য ও বেতার, শিক্ষা, ভূমি, প্রশাসন, ধর্ম, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধিতা করার জন্য তিনি গ্রেফতার হন।

বিচারপতি টিএইচ খান ১৯৯২ সালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯২ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৯৫ সালে টিএইচ খান এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচারকার্য পরিচালনা করে দেশে ফিরে আসেন এবং আবার আইন পেশায় নিয়োজিত হন।

আইন পেশা ছাড়াও বিচারপতি টিএইচ খান প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এসএসএ

টিএইচ খান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর