যাত্রীর অপেক্ষায় গাড়ি, ভেতরে ছিনতাইকারী- আরও ৩ জন গ্রেফতার
১৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে মাইক্রোবাসে তুলে জিম্মি করে ছিনতাই করে, এমন একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এর আগে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল। মোট ৯ জনকে গ্রেফতারের পর এখন র্যাব-ডিবি বলছে, চক্রের আর মাত্র একজন সদস্য এখনও পলাতক আছে।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানিয়েছেন, রোববার রাত সোয়া ২টায় নগরীর পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলী জেলেপাড়া ব্রিজের কাছ থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি দোনলা বন্দুক, দু’টি এলজি এবং চার রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার তিনজন হল—সরোয়ার হোসেন মনু (৩৪), মো. রিপন (৩২) এবং তাসলিয়াম বেগম (৩৬)। র্যাবের দাবি, মনু এই চক্রের মূলহোতা।
এর আগে, গত ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম ও বন্দর শাখা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেফতার করে। এরা হল—শাহ আলম আকন (৩২), আবুল কালাম (৪৭), জাকির হোসেন সাঈদ (৩৬), মো. আল আমিন (২৯), মিজানুর রহমান (৫৩) এবং নাহিদুল ইসলাম ওরফে হারুন (৩১)।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া তাসলিমা বেগম ডিবির হাতে গ্রেফতার মিজানুর রহমানের স্ত্রী। চক্রের ১০ সদস্যের মধ্যে এখন তাসলিমার ভাই শামছুল শুধু পলাতক আছে বলে জানিয়েছেন ছয় জনকে গ্রেফতারে নেতৃত্ব দেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) নোবেল চাকমা।
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর নগরীর অলঙ্কার মোড় থেকে মাইক্রোবাসে উঠে নির্মমভাবে খুনের শিকার হন হোসেন মাস্টার নামে এক প্রবাসী। পাহাড়তলী থানায় এ সংক্রান্ত মামলার ছায়া তদন্তে নেমে ডিবি ছয় জনকে গ্রেফতার করেছিল। ডিবি জানিয়েছিল, হোসেন মাস্টারকে খুনের সময় মাইক্রোবাসে শাহ আলম, আবুল কালাম, জাকির, আল আমিন, মনু ও রিপন—এই ছয়জন ছিল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শাহ আলম, কালাম, জাকির ও আল আমিনকে গ্রেফতার করেছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে রিপন ও মনুর সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছিল। এছাড়া তাদের চক্রের আরেক সদস্য শামছুর কথা বলেছিল। শামছু এখনও পলাতক আছে।’
র্যাব-৭ এর হাটহাজারী ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হোসেন মাস্টারকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা মনুও স্বীকার করেছে। তারা দু’টি মাইক্রোবাস ব্যবহার করে ছিনতাই করত। হোসেন মাস্টারকে খুনের ঘটনায় যে মাইক্রোবাসটি ব্যবহৃত হয়েছিল সেটি মিজানুর রহমান দিয়েছিল, যেটি তার স্ত্রী তাসলিমার নামে নিবন্ধিত। তাসলিমা নিজেও চক্রের সদস্য। আমরা তাকেও গ্রেফতার করেছি। তাসলিমার ভাই শামছু শুধু পলাতক আছে। তাকে ধরার চেষ্টা করছি।’
র্যাব কর্মকর্তারা গ্রেফতার মনুকে চক্রের মূল হোতা বললেও ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মনু-শাহ আলম এবং কালাম তিনজনই চক্রের প্রধান। তাদের নেতৃত্বে বাকিরা কাজ করে।
র্যাব ও ডিবির কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, এই চক্রের ছিনতাইয়ের ধরণ হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে মাইক্রোবাস। ভেতরে বসা থাকে আরও কয়েকজন। গন্তব্যে পৌঁছাতে সাধারণ কেউ আরোহী হলেই বিপত্তি ঘটে। মহাসড়কে নির্জনে পৌঁছার পর ভেতরে বসা যাত্রীদের স্বরূপ বেরিয়ে পড়ে। পেশাদার ছিনতাইকারীরা ওই যাত্রীকে জিম্মি করে কেড়ে নেয় টাকা-মোবাইল, ব্যাংকের কার্ড। বিকাশ নম্বর থাকলে ট্রান্সফার করে নেয় টাকা। শুধু সম্পদ নয়, অনেকসময় কেড়ে নেয় প্রাণও।
র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে মনু ঢাকা-মাওয়া সড়কেও একই কায়দায় ছিনতাইয়ের কথা জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা-পর্ণোগ্রাফিসহ বিভিন্ন অভিযোগে কমপক্ষে ১০টি মামলা আছে।
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ