আন্দোলনের মধ্যেও ভর্তি চলছে শাবিপ্রবিতে
১৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৩১
শাবিপ্রবি: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্মম হামলার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনের মধ্যেও শাবিপ্রবিতে চলছে ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আমরা ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করুক। ভর্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
মুশতাক আহমদ আরও বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ভর্তিতে ‘এ’ ইউনিটে মেধা তালিকা থেকে ৯৫৬ থেকে ১ হাজার ৯৫৫ পর্যন্ত এবং স্থাপত্য বিভাগে ৪টি আসনের জন্য মেধাক্রম ৩১ থেকে ৩৪ পর্যন্ত ভর্তির জন্য ডাকা হয়েছে। পরেরদিন মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ‘বি’ ইউনিটে বিজ্ঞান শাখায় ১৭৬টি আসনের বিপরীতে মেধাক্রম ২২১ থেকে ৫২০ পর্যন্ত, মানবিক শাখায় ২৩৩টি আসনের বিপরীতে মেধাক্রম ৩০০ থেকে ৬৯৯ পর্যন্ত এবং বাণিজ্য শাখায় ৬৪টি আসনের বিপরীতে মেধাক্রম ৮৪ থেকে ১৬৩ পর্যন্ত ভর্তির জন্য ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আজও উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রভোস্টদের রুমে তালা
এবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাবিপ্রবি
নিজের অনুভূতি জানিয়ে ঢাকার বিএফ শাহীন কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থী তাসফীক রহমান বলেন,‘ শাবিপ্রবিতে প্রথমবার এসেছি, এখানে এসে ভালোই লাগছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আরও ভালো লাগত। গতকালের ঘটনা শুনে আমার বাবা-মা আসতে না করছিল। তবে আমি সকালে ভর্তির এখানে আসি।’
মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ থেকে আসা পারমিতা চৌধুরী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা এখানে ভর্তি হতে এসেছি, আমরা ভর্তি হয়ে চলে যাব। আমার কাছে একটাই প্রত্যাশা সুষ্ঠুভাবে ভর্তি হয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়া।’
ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুল আলিম বলেন, ‘গতকাল আমাদের মেসেজ দেওয়া হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম চলবে। তাই আমি ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছি। আসার পর মনে হলো ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি দেখে অস্বাভাবিক। তাই একটু খারাপ লাগছে। আশাকরি ছেলেকে ভর্তি করিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারব।’
এদিকে ভর্তি কমিটি সুত্রে জানা যায়, সকাল থেকে মেধা তালিকার ৯৫৬ থেকে ১ হাজার ৯৫৫ সিরিয়ালের মধ্যে ১৯৬ জন শিক্ষার্র্থী ভর্তি হওয়ার শাবিপ্রবিতে এসেছেন।
উল্লেখ্য যে, বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভ করছেন বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের ছাত্রীরা। আন্দোলনের তৃতীয় দিন রোববার বিকেল ৩টার দিকে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদকে এম ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকা হয়।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ ভিসিকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে গেলে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশ-শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় আধঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেটের গুলিতে অন্তত ৩০জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে ভিসিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনার পর উপাচার্যের পাশাপাশি প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আজ (সোমবার) সকাল ৯টা থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীরা স্লোগানে বলেন, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘পতন পতন পতন চাই, উপচার্যের পতন চাই’, ‘ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালাও একসাথে’, ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি গুলি মারে, সেই ভিসি চাই না’।
১১টার দিকে প্রথম ছাত্রী হল বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলে প্রভোস্টদের রুমে তালা দিয়েছেন উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর ছেলেদের হলে তালা ঝুলানোর জন্য যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা ক্যাম্পাস ও হল ছাড়বেন না। যতক্ষণ না স্বৈরাচার উপাচার্য পদত্যাগ করছেন ততক্ষণ আন্দোলনের মাঠে থাকবে শিক্ষার্থীরা। যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান করবে বলে এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
এছাড়া সকাল থেকে ছেলেদের শাহ পরাণ হল, বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান হল, প্রথম ছাত্রী হল, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনে হল না ছেড়ে অবস্থান করতে দেখা দেয়া। কিছু কিছু শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সার্বিক বিষয়ে ফিজিক্যাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে সভাপতি, রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেনকে সদস্য সচিব এবং সকল ডিনকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু থাকায় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে অনেককে অফিস ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। অনেকে আবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন।
তবে, শাবিপ্রবির ২০২১ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানা ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
সারাবাংলা/এনএস
২০২০-২১ সেশনের ভর্তি আন্দোলন শাবিপ্রবি শাবিপ্রবি আন্দোলন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়