ঢাকা মেডিকেলের নমুনার ৩০% ওমিক্রন, ৬৭% ডেল্টা
১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১০:০৩
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ২৪টি নমুনার মধ্যে ৬৭ শতাংশের সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে ৩০ শতাংশ নমুনায় শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি। ঢামেক হাসপাতালের এসব নমুনার সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) জিনোম সিকোয়েন্সিং ল্যাবে।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, আমরা কিছুদিন ধরেই দেখছি— সাম্প্রতিক সময়ের নমুনার কার্ভগুলো ডেল্টার তুলনায় ভিন্ন। আমরা বিএসএমএমইউয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যৌথভাবে সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ করছি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯৮ শতাংশ নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টার প্রভাব দেখেছিলাম। তবে সেই প্রবণতা এখন পরিবর্তন হচ্ছে।
তিনি বলেন, এরপর যখন কার্ভের পরিবর্তন দেখি তখন আবার ২৪টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করা হয়। সেখানে দেখা গেল, সাতটি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ওমিক্রন পাওয়া গেছে। একটি মরিশাস ধরনের ট্রেন্ড দেখা গেছে। আর বাকি ১৬টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
ডা. শাহানা আরও বলেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংখ্যা বাড়ছে। আরও কিছু নমুনার সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে। সেগুলোর ফলাফল দেখলে বোঝা যাবে। ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা বেশি। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
ডেল্টার প্রভাব থাকলেও ওমিক্রনের বিষয়ে সাবধান করে অধ্যাপক ডা. শাহানা বানু বলেন, ওমিক্রন খুব দ্রুতই ডেল্টাকে রিপ্লেস করে ফেলতে পারে। তবে ডেল্টা কিন্তু মারাত্মকভাবে সংক্রমণ বাড়ায় ফুসফুসে। ওমিক্রনে তেমন হওয়ার এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এখন যারা মারা যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই ডেল্টার কারণে অথবা অন্যান্য কোমরবিডিটির কারণে। ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।
এদিকে ডেল্টার প্রভাব এখনো বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম। ১৭ জানুয়ারি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদের জনমনে এমন একটি বিষয় প্রচলিত আছে যে ওমিক্রন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এতে খুব বড় ধরনের সমস্যা হয় না। আমাদের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ও জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে নিয়োজিত আইইডিসিআর কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, এখন পর্যন্ত সংক্রমণ হওয়া ব্যক্তিদের ওপরে সমীক্ষা চালিয়ে দেখতে পেয়েছেন যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হারই বেশি।
তিনি বলেন, ওমিক্রনের সংক্রমণও বাড়ছে। তবে সেটি ডেল্টার মতো নয়। ঢাকায় ওমিক্রন কিছু বাড়ছে। কিন্তু আমাদের অন্যান্য শহরগুলোতে ডেল্টার প্রাদুর্ভাব বেশি। এর আগে আপনারা ডেল্টার ভয়াবহতা দেখেছেন। এজন্য সবাইকে সাবধান হতে হবে।
এর আগে ১৬ জানুয়ারি ওমিক্রনে তুলনামূলকভাবে ক্ষতি কম হয় বলে তাতে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই বলে সতর্ক করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
প্রতিষ্ঠানটির সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট রিপ্লেস করেছে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টকে। বাংলাদেশেও হয়তো এক সময় সেটি হয়ে যাবে। আমাদের অনেকেরই একটি ধারণা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সেটি ভয়াবহ কিছু নয়। এটি কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে একেবারে নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি।
তিনি বলেন, আমাদের ধরে নিতে হবে বাংলাদেশে এখনো মূলত ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তবে ওমিক্রনের সংক্রমণ ঘটেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন ওমিক্রন ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট রিপ্লেস করেছে, বাংলাদেশেও হয়তো একসময় সেটি হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ যার বেলায় যেটি প্রযোজ্য, সেটি মেনে চললে সংক্রমণের এখনকার যে চিত্র, যে ঢেউ আসছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি— সেই ঢেউটি গতবারের মতো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব। এখানে আতঙ্ক নয়, সচেতনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর