চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের করা মামলার অধিকতর তদন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশেনের (পিবিআই) পরিবর্তে অন্য কোনো সংস্থাকে দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে পিবিআইয়ের হাতেই থাকছে মামলার তদন্তভার।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
গত ১৪ নভেম্বর বাবুল আক্তার তার নিজের দায়ের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত পিবিআইয়ের পরিবর্তে পুলিশের অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে করার আবেদন করেছিলেন আদালতে।
বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাবুল আক্তারের দায়ের করা যে মামলা ছিল সেটা পিবিআইয়ের পরিবর্তে পুলিশের অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে অধিকতর তদন্তের আবেদন আমরা করেছিলাম। সেইসঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার পরিবর্তনও চেয়েছিলাম। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আজ (বুধবার) সংস্থার বিষয়ে শুনানি হয়েছে। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নানাভাবে স্ত্রী খুনে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার আলোচনা শুরু হয়। ঘটনার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ্যে আনেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিলের পর ২০২১ সালের ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। ওইদিনই (১২ মে) বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি বর্তমানে ফেনী কারাগারে আছেন।
এদিকে গত ১৪ অক্টোবর কারাবন্দি বাবুল আক্তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দাখিল করেন। ২৭ অক্টোবর ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয় বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে। আদালত বাবুলের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে উল্লেখ করে অধিকতর তদন্ত করে পুনরায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
আদালতের এ আদেশের ফলে এখন মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুলের আক্তারের দায়ের করা মামলার পাশাপাশি তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার তদন্তও চলছে। উভয় তদন্তের দায়িত্বে আছেন পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক।
বাবুল আক্তারের নিজের দায়ের করা মামলায় পিবিআইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।