পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে ৭ কোটি টাকা পাচার চেষ্টার অভিযোগ
১৯ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঢাকার একটি রফতানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় সাত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের চেষ্টার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঘোষণার চেয়ে বেশি পণ্য ফিলিপাইনে রফতানির চেষ্টা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। যদি সফল হতো তাহলে ৬ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮৮ টাকা বাংলাদেশ থেকে ওই দেশটিতে পাচার হয়ে যেত।
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে রফতানির জন্য পণ্যগুলো রাখা হয়েছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কায়িক পরীক্ষা শেষে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চারটি চালানে ঘোষণার চেয়ে কমপক্ষে সাড়ে ৫ লাখ পিস অতিরিক্ত তৈরি পোশাক পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি হলো ঢাকার উত্তরার রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের আরএম সোর্সিং বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে চারটি চালানে রফতানি পণ্যগুলো জাহাজীকরণপূর্ব শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্নের দায়িত্ব পেয়েছিল সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান নগরীর সদরঘাটের বেঙ্গল প্রগ্রেসিভ এন্টারপ্রাইজ। চালানের পণ্যভর্তি কনটেইনার রাখা হয়েছিল সীতাকুণ্ডের কুমিরায় কেডিএস লজিস্টিকস লিমিটেডের ইয়ার্ডে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার উপ-কমিশনার মো. শরফুদ্দিন মিঞা সারাবাংলাকে জানান, চারটি চালানে ২৪ হাজার ৩৪৪ পিস তৈরি পোশাক রফতানির ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় দেখা গেছে— কনটেইনারে রফতানির জন্য ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩২২ পিস তৈরি পোশাক রাখা হয়েছে।
প্রতি পিস পোশাকের ঘোষিত মূল্য ছিল এক দশমিক ২৩ ইউরো। এ হিসেবে রফতানিকারকের ঘোষিত ২৪ হাজার ৩৪৪ পিস তৈরি পোশাকের জন্য মূল্য হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে ২৯ হাজার ৯৪৪ ইউরো বা ২৯ লাখ ৬০ হাজার ২৪৮ টাকা। যদি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩২২ পিস ঘোষণা দেওয়া হত, তাহলে কাস্টমসের হিসেবে ৬ কোটি ৯২ লাখ ২৭ হাজার ৯৫২ টাকা পাওয়া যেত। ঘোষণার চেয়ে বেশি পণ্য রফতানি করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৬ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮৮ টাকা পাচারের চেষ্টায় ছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।
কাস্টমস কর্মকর্তা শরফুদ্দিন মিঞা সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করবে সে অনুযায়ী টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসবে। এখানে দেখা যাচ্ছে, ঘোষণা ছাড়া অনেক বেশি পণ্য রফতানির চেষ্টা হয়েছে। যেহেতু ঘোষণা নেই, সেই টাকাটা তো ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেনি। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, টাকাটা বিদেশে সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত ছিল প্রতিষ্ঠানটির। বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিয়ে যাবে আর টাকা আসবে না, তাহলে এটি তো সুস্পষ্টভাবে অর্থপাচারের চেষ্টা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
কাস্টমস কমকর্তাদের সন্দেহ, ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত আরএম সোর্সিং বাংলাদেশের ১১৩টি রফতানি পণ্য চালানের মাধ্যমেও অর্থপাচার হয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানের কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/আরডি/একে