নিয়ম না মেনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব, ফিরিয়ে দিল বিইআরসি
১৯ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৩৪
ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ভর্তুকি কমাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোরা যে পরিকল্পনা করা হচ্ছিল আপাতত তা হচ্ছে না। গ্যাসের দাম বাড়াতে গত কয়েকদিনে বিতরণ সংস্থাগুলো যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সংস্থাটির এক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র বলছে, গ্যাসের দাম বাড়াতে কোম্পানিগুলো যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা নিয়ম মেনে হয়নি বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, গ্যাসের দাম বাড়াতে গত কয়েক দিনে তিতাস, পশ্চিমাঞ্চল, বাখরাবাদসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিইআরসির কাছে তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। প্রস্তাবে এক চুলা ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা এবং দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করার কথা বলেছে। এছাড়া আবাসিক পর্যায়ে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারের বর্তমান মূল্য ১২ দশমিক ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৩৭ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় তারা।
সেইসঙ্গে সিএনজি প্রতি ঘনমিটার ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৬ দশমিক শূন্য ৪ টাকা, হোটেল রেস্টুরেন্টের গ্যাসের দাম ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ দশমিক ৯৭ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭ দশমিক শূন্য ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ দশমিক শূন্য ২ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ দশমিক ৮৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ দশমিক শূন্য ৯ টাকা এবং চা শিল্পে ১০ দশমিক ৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩ দশমিক ২৪ টাকা করার প্রস্তাব করেছে সংস্থাগুলো। এর বাইরেও তারা প্রস্থাব দেয় যে, বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসের বর্তমান দাম ৪ দশমিক ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৬৬ টাকা করতে হবে। এছাড়া বাণিজ্যিক ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম গড়ে ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। তবে তাদের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বিইআরসি।
বিইআরসি’র এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, গত সপ্তাহ থেকে গ্যাসের দাম বাড়াতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব আসে বিইআরসিতে। তাতে প্রায় সবক্ষেত্রেই দ্বিগুণ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। দাম বাড়াতে হলে কিছু নিয়ম মেনে প্রস্তাব করতে হয়। যা অনেক কোম্পানি অনুসরণ করেনি। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়াতে কোনো কোম্পানি প্রস্তাব করতে পারে না। প্রতিটি কোম্পানি গ্যাস কিনে বিতরণ করে থাকে। সেক্ষেত্রে তারা বিতরণ চার্জ বাড়ানো বা কমানোর প্রস্তাব করতে পারে। এখানে তারা যে প্রস্তাব করেছে তা বিইআরসির নিয়ম বহির্ভুত।’ তবে এ বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান বিস্তারিত জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আন্তজার্তিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী, বাড়তির দিকে রয়েছে তরলীকৃত গ্যাসের দামও। ফলে চাপ বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বাপেক্স ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডের গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারের গড় ক্রয়মূল্য ১ টাকা ২৬ পয়সা। কিন্তু শেভরনের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ২ টাকা ৮৯ টাকা দিয়ে। আর অন্য আরেক কোম্পানি তাল্লোর দাম ৩ টাকা ১০ পয়সা করে। অন্যদিকে এলএনজির ক্রয়মূল্য ৩৬ টাকা ৬৯ টাকা। সব চার্জ পরিশোধ শেষে এর মূল্য দাঁড়ায় ৫০ টাকা ৩৮ পয়সা।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ভুর্তুকি বাবদ মোট বরাদ্দ রাখা হয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং সারের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বলছে, এই তিন খাতে বরাদ্দ দরকার ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি কোনোভাবে মেটানো সম্ভব নয় বলেও জানাচ্ছে সুত্রগুলো।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো না যায় তাহলে হয়তো বিকল্প চিন্তা করতে হবে। তবে বিকল্প পথ কী হতে পারে- তা এখনো জানা নেই।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে সবধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি। গত অক্টোবরে জ্বালানি মূল্যে গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এরপরে নভেম্বরে কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়তি রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বাড়তি থাকায় দেশের বাজারে গত নভেম্বরে লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। যার প্রভাব পড়েছে গণপরিবহন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তার প্রভাব পড়বে বিদ্যুৎ এবং রান্নায়ও। যা সাধারণ মানুষের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে বিইআরসি।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম