করোনা শনাক্তের হার ৪০%, ‘রেড জোনে’ রাজশাহী
১৯ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৩১
রাজশাহী: রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ব্পিরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার আবার বেড়েছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর ৩৭১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৪৯ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার হয়েছে ৪০ দশমিক ১৬ শতাংশ। করোনার এই সংক্রমণে রাজশাহী আবারও উচ্চঝুঁকিতে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘোষিত ‘রেড জোনে’ রয়েছে জেলাটি।
বুধবারের (১৯ জানুয়ারি) তথ্য বলছে, এদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ২৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৯৭ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট হয়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৩৫ দশমিক ০১ শতাংশ। অন্যদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ আসেন ৫২ জন। এই ল্যাবে সংক্রমণের হার হয় ৫৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। দুই ল্যাব মিলিয়ে গড় সংক্রমণের হার ৪০ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সংক্রমণ হারের এই ঊর্ধ্বগতির কারণেই স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘোষিত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (রেড জোন) জেলার তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাজশাহী। মূলত নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ শনাক্তের হার হলেই সেই জেলাকে রেড জোনে রাখছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই তালিকায় ঢাকা ও রাঙ্গামাটিসহ রয়েছে ১৩টি জেলা। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ এবং রাঙ্গামাটিতে এই হার ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
৫ মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ
সারাদেশের মতো রাজশাহী বিভাগেও গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৬৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯ জন, বগুড়ায় ৯৪ জন, নওগাঁয় ২৯ জন, নাটোরে ২০ জন, জয়পুরহাটে ১৭ জন, সিরাজগঞ্জে ৩২ জন এবং পাবনায় ১৮ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
ওমিক্রন শনাক্তে হয়নি জিনোম সিকোয়েন্সিং
রাজশাহীতে করোনার নতুন সংক্রমণ হু হু করে বাড়লেও এর মধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ভ্যারিয়েন্ট নির্ণয়ের জন্য নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হয়। কিন্তু রাজশাহীর কোনো নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং এখনো করা হয়নি।
এর আগে গত বছরের মাঝামাঝিতে রাজশাহী অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বেড়েছিল। ওই সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিছু নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিল। ওই সময় রাজশাহীতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ও এখানকার কোনো নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়নি। বাধ্য হয়ে ‘আঞ্চলিক লকডাউন’ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
এর মাস দুয়েক পর সংক্রমণ কমে আসে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবেই কমেছিল। এর মধ্যে কোনো কোনোদিন শনাক্তের হার শূন্যের কোঠায়ও নেমে আসে। তবে নতুন বছরের শুরু থেকে ফের আবার বাড়ছে সংক্রমণ ও শনাক্তের হার।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, রাজশাহী বিভাগে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটেছে কি না, তা নিয়ে কোনো পরীক্ষা হয়নি। তবে যে ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন, সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। করোনা মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চালু হয়নি সদর হাসপাতাল
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজশাহী সদর হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে লক্ষ্যে সেখানে শুরু হয় সংস্কার কাজ। ১৫টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যাসহ মোট ১৫০ শয্যা থাকবে এই হাসপাতালে। এরই মধ্যে সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইনও বসানো হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালটিও চালু করা যায়নি।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যখন ছড়াচ্ছিল, ওই সময় আমরা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেয়েছি। এবার যেন সেরকম পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজশাহী সদর হাসপাতাল চালু করা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, সারাদেশের মতো রাজশাহীতে গত কয়েকদিন ধরেই সংক্রমণ বাড়ছে। এরই মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ড. মো. আবদুল মান্নান, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা রাজশাহীতে আইসোলেশনে আছেন। এছাড়া সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ও রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক করোনা পজিটিভ হয়ে আছেন ঢাকায়। এর মধ্যে বুধবার রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুসও করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
সারাবাংলা/টিআর
করোনা শনাক্তের হার করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ রেড জোন সংক্রমণের হার