২ ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে করোনা আক্রান্তদের প্রায় সবাই সুস্থ
২০ জানুয়ারি ২০২২ ১০:২৬
ঢাকা: দেশে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিত হয়েছেন ৪৭ শতাংশ। দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে আক্রান্তদের মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ১২ শতাংশকে। এর মাঝে মারা গেছে মাত্র একজন যা শতাংশ হিসেবে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও যারা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছেন তাদের প্রায় শতভাগ সুস্থ হয়ে গেছেন চিকিৎসা নেওয়ার পরে। একইসঙ্গে ৮৮ শতাংশ আক্রান্ত কোনো জটিলতা ছাড়াই সুস্থ হয়ে গেছেন। এদের সবার নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি দেখা যায়।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক গবেষণা জরিপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ৫৯০টি কোভিড-১৯ সংক্রমিত নমুনার মেটাডাটা বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।
গবেষণায় ২০২০ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ৫৯০ জনের মেটাডাটা বিশ্লেষণ করা হয়। ভ্যাকসিন নেওয়ার তথ্য, হাসপাতালে ভর্তির তথ্য ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করা হয় এ গবেষণায়। এই সময়ে দেখা যায়, এওয়াই দশমিক ১২৭ (AY.127) লিনিয়েজের উপস্থিতি প্রভাব ফেলে। তবে এই গবেষণায় ডেল্টার কোনো সুনির্দিষ্ট লিনিয়েজের বিষয়ে জানা যায় নাই।
গবেষণায় পাওয়া ডেল্টা আক্রান্তদের ভ্যাকসিনেশন বিশ্লেষণ
২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করা ৮৬৭টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করা হয়। এর মাঝে একটি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে বেটার উপস্থিতি দেখা গেলেও বাকি ৮৬৬টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। ডেল্টা সংক্রমিত এই ৮৬৬টি নমুনার মাঝে ৫৯০টি নমুনার মেটাডাটা বিশ্লেষণ করা হয়।
এর মাঝে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছিলেন ৩৫৩ জন বা ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ তারা প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পরে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়। আর ৫৯০ জনের মাঝে দেখা যায় ২৭৬ জন বা ৪৭ শতাংশ দুই ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।
গবেষণায় দেখা যায়, দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে ২৭৬ জন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হলেও তাদের মাঝে ৮৮ দশমিক ৪০ শতাংশকে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। মাত্র ৩২ জন বা ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। এর মাঝে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মাঝে মারা যান মাত্র একজন বা দশমিক ৩৬২ শতাংশ। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও সংক্রমিত হলেও তার অন্যান্য অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস দেখা যায় মেটাডাটার বিশ্লেষণে পাওয়া তথ্যে।
গবেষণায় ৫৯০ জনের মেটাডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় পুরুষের সংখ্যা ৩০৭, যা মোট নমুনার ৫২ শতাংশ।
৫৯০ জনের মেটাডাটার বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণ
বয়সসীমা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বোচ্চ কোভিড-১৯ ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিতদের বয়স ৩৬ বছর থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। এই বয়সসীমায় ২৮৭ জনের মাঝে ডেল্টা সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে।
জরিপে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সসীমার ৩৩ শতাংশের কোভিড-১৯ নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ৫৯০ জনের মাঝে ১৯৪ জনের কোভিড-১৯ নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়।
এছাড়াও ৫৫টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টার সংক্রমণ শনাক্ত হয় যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। ৫৪টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এই দুই বয়সসীমাতেই ৯ শতাংশ হারে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
৫৯০ জন ডেল্টা আক্রান্তের রক্তের গ্রুপ বিশ্লেষণ
সংক্রমিতদের মাঝে সর্বাধিক ৩৫ শতাংশ বা ১৬৭ জনকে পাওয়া যায় যাদের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। আর ও পজিটিভ রক্তের গ্রুপে ১৬০ জন বা ৩৪ শতাংশকে পাওয়া যায় ডেল্টায় সংক্রমিত।
সংক্রমিতদের মাঝে ২০ শতাংশ বা ৯৩ জনকে পাওয়া যায় যাদের রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। এবি পজিটিভ রক্তের গ্রুপে ৩৬ জন বা ৮ শতাংশকে পাওয়া যায় ডেল্টা সংক্রমিত।
এছাড়াও যাদের মাঝে ডেল্টার সংক্রমণ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে এ নেগেটিভ রক্তের গ্রুপে পাঁচ জন বা এক শতাংশ, বি নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের তিনজন বা এক শতাংশ, ও নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের সাতজন বা এক শতাংশ।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস