Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শান্তি মিশনে র‌্যাবকে নিষিদ্ধ চায় ১২ মানবাধিকার সংস্থা

সারাবাংলা ডেস্ক
২০ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৪২

ঢাকা: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যদের নিষিদ্ধ করতে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক ১২টি মানবাধিকার সংস্থা। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জিন পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের কাছে এই চিঠি দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রায় দুই মাস আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের কাছে ‘প্রাইভেটলি’ ওই চিঠি পাঠানো হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে— এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উত্তর দেয়নি জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন্স।

জাতিসংঘের কাছে চিঠি পাঠানো মানবাধিকার সংস্থাগুলো হলো— অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগিনেস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট, এশিয়ার হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এএনএফআরইএল), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট, সিভিসাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টানন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেট ফর হিউম্যান রাইটস ও ওয়ার্ল্ড, অর্গানাইজেশন অ্যাগিনেস্ট টর্চার (ওএমসিটি)।

চিঠিতে বলা হয়েছে— র‌্যাব সদস্যদের নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

রবার্ট কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি বলেছেন, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ যদি শান্তিরক্ষীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করায় গুরুত্ব দেন, তাহলে তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে; নির্যাতনের প্রামাণ্য রেকর্ড আছে র‌্যাবের মতো এমন ইউনিটকে মোতায়েনের বাইরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণ পরিষ্কার। এখন এ বিষয়ে জাতিসংঘের একটি সীমারেখা টানার সময় এসেছে।

ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে— ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সরকার র‌্যাবকে একটি বিদেশি ‘এনটিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যারা ‘গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট’- এর অধীনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, জড়িত। কিন্তু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিশোধমূলক আচরণ করেছে। জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা রিপোর্ট করেছেন যে, তাদের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন কর্মকর্তারা। তারা তাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন। তাদেরকে মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছেন। সেসব বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, তাদের পরিবারের সদস্যকে জোরপূর্বক গুম করা হয়নি।

৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অ্যান্ড ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ান্সেস উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। এ সব বিষয়ে আগে তদন্ত ছাড়া বা ভেটিং প্রক্রিয়া ছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী অপারেশনে র‌্যাবের সদস্যদের অংশগ্রহণ বৈধ হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। যেসব কর্মকর্তা নির্যাতনে জড়িত বা যারা এসব নির্যাতন বরদাস্ত করেছেন, দৃশ্যত তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীতে পদোন্নতি পেয়েছেন বা পুরস্কৃত হয়েছেন।

২০২১ সালের মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিচেল ব্যাচেলেট বলেছেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অশোভন আচরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের এবং এটি উদ্বেগের বিষয়। র‌্যাবে চাকরি করছেন এমন ব্যক্তিদের ঘন ঘন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে মোতায়েন করা হয়, যা উদ্বেগজনক।

এরই মধ্যে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান প্রধান বেনজীর আহমেদ। জাতিসংঘে তার চাকরি করার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এটি এমন এক সময় যখন তার কমান্ডের অধীনে থাকা কর্মকর্তারা ১৩৬ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছেন। ১০ জনকে জোরপূর্বক গুম করেছেন বলে অভিযোগ আছে। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হার্ভি ল্যাডসোস এ সময়ে তাকে ‘এক্সটারনাল রিভিউ অব দ্য ফাংশন্স, স্ট্রাকচার, অ্যান্ড ক্যাপাসিটি অব দ্য ইউএন পুলিশ ডিভিশনের’ একটি নিরপেক্ষ রিভিউ টিমে একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেনজীর আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিথ্যা ও বানোয়াটের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যেসব মানুষ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে র‌্যাবকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছেন, তারা আমাদের সরকার এবং আমাদের দেশকে বিব্রত করার চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার জবাবে র‌্যাবের উপ-প্রধান কে এম আজাদ বলেছেন, যদি অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনা মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। তাহলে দেশের স্বার্থে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচে জাতিসংঘের পরিচালক লুইস চারবোনেউ বলেছেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে র‌্যাবের সদস্যদের মোতায়েনের বিষয়টি একটি বার্তা দেয়। তা হলো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য একজনকে জাতিসংঘের চাকরি থেকে যদি বিরত রাখা না হয়, তাহলে জাতিসংঘ মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। যেসব দেশ শান্তিরক্ষী নিচ্ছে এবং যারা এতে সেনা পাঠাচ্ছে, তাদেরকে জাতিসংঘের একটি স্পষ্ট সংকেত দেওয়া উচিত। তা হলো- নিপীড়ক ইউনিটগুলো জাতিসংঘের অংশ হতে পারবে না।

আরও পড়ুন
‘খুনিকে আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আবার মানবতার কথা বলে’
‘র‍্যাবের ৬ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী’
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে হাসির খোরাক বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরাস্ত করতে পারবে না— মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে হানিফ
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় শান্তি মিশনেও প্রভাব পড়তে পারে: ফখরুল
‘নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান পরিবর্তন করবে’
পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে খুন-গুম প্রমাণ হয়েছে নিষেধাজ্ঞায়: মির্জা ফখরুল

 

 

সারাবাংলা/একে

মানবাধিকার সংগঠন র‍্যাব শান্তিরক্ষা মিশন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর