‘বাংলাদেশ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়নি, প্রবাসীরা করতে পারে’
২০ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:১৭
ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে কোনো লবিস্ট নিয়োগ করা হয়নি। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের প্রয়োজন ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী লবিস্ট নিয়োগ করে থাকতে পারে— এমনটিই বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেকমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় বিদেশে বিএনপির ‘লবিস্ট নিয়োগ’ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাব দিতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের তথ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, জাতীয় সংসদে এবং নিজেদের অফিসে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ করে নিজেদের দুর্নীতি, অপশাসন এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশ-বিদেশে যে সমালোচনার ঝড় বইছে তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসাবে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। তাদের ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি বরং মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য জনগণ অক্ষমের আর্তনাদ বলে গণ্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি ৮টি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং তার একটি ফার্মকেই দিয়েছে ১০ লাখ অর্থাৎ ১ মিলিয়ন ডলার। অন্য ৭টি ফার্মের সব তথ্য তার কাছে আছে। কিন্তু কিছুই দিতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে, তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি বিভিন্ন নামে ১২টির বেশি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু তিনি কে, কার সঙ্গে, কত টাকার চুক্তি করেছে- সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি। অর্থাৎ স্বভাবজাত ফাঁকা আওয়াজ করেছেন।’
‘সত্য এই যে, বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনও নেয়নি, লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। লবিস্ট যেসব কথা বলবেন বিএনপি নেতারা তা নিজে থেকেই বলে থাকেন এবং তাও গোপনে না, প্রকাশ্যে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবের যেসব পত্রের কপি সাংবাদিকদের মাঝে বিলি করেছেন তাতে কোথাও এমন কোনো বক্তব্য নেই যা তিনি এবং দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে বলেননি, মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি কিংবা আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি।’
প্রবাসীরা করতে পারে
ড. খন্দকার শোরফফ হোসেন বলেন, ‘এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করেন। সেই দেশগুলোতে তাদের আত্মীয়, বন্ধু, সহায়-সম্পদ রয়েছে। তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সুশাসনে আনন্দিত হন। আবার বৈষম্য, অপশাসন, দুর্নীতি, গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে দেশের মর্যাদা হানি হলে স্বাভাবিকভাবেই কষ্ট পান, ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী হন।’
তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে অদ্যাবধি যখনই তারা দেশের সংকট দেখেছেন, তখনই তারা প্রতিবাদ করেছেন। সংশ্লিষ্ট দেশে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, এমনকি মিছিল করেছেন। সেসব দেশের সরকার, আইন সভার সদস্য, মানবাধিকার সংগঠনে তারা লবিং করেছেন। সব কিছুই তারা করেন দেশকে ভালোবেসে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে। কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের লক্ষ্যে স্ব স্ব দেশের আইন অনুযায়ী আরও যা কিছু করা সম্ভব তাও তারা করেন এবং করতেই পারেন।’
সরকার লবিস্ট নিয়োগ করেছে
ড. মোশররফ হোসেন বলেন, “সরকারের মন্ত্রীদের দাবি, তারা কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেননি। কিন্তু তথ্য প্রমাণ বলে ভিন্ন কথা। আওয়ামী লীগের পক্ষে সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিস্ট ‘অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো’কে নিয়োগ দেন ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর, যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০০৫ থেকে। ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে এই লবিস্ট ফার্মকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসাবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছেন।”
‘বহু বছর ধরে নিয়মিত চুক্তিতে কাজ করা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন ও সফর বিনিময়ের লক্ষ্যে মাত্র এক মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার ফি’তে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল আরেক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডল্যান্ডার’কে। এ ব্যাপারে কেঁচো খুঁড়তে গেলে আরও বহু বড় বড় সাপ বেড়িয়ে আসবে’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এসব চুক্তি সম্পর্কে মন্ত্রীদ্বয় যদি না জেনে থাকেন তাহলে সরকার ও সরকার দলীয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞ এসব মন্ত্রীর বিজ্ঞের মতো কথা বলা বন্ধ করা উচিত। আর যদি জানেন, তাহলে তথ্য গোপন করার অভিযোগে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রর্থনা করা উচিত।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম