করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিশুর প্রতি যৌন সহিংসতা
২০ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৪৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় তীব্র উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংস্থাটি বলছে, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে যৌন নির্যাতনকে গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গত এক সপ্তাহে কন্যাশিশুর প্রতি বর্বরতার পাঁচটি ঘটনার উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় মহিলা পরিষদ। সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর সই করা ওই বার্তায় চলমান অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে উত্ত্যক্ত, যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ সাপেক্ষে দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণে আশু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের গতকাল বুধবারে (১৯ জানুয়ারি) ঘটনা। বলা হয়েছে, করোনা ভ্যাকসিন নিতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে লাইনে দাঁড়িয়েছিল বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় নারী শিক্ষার্থীদের আনার খাঁ পাড়ার মর্তুজ আলীর ছেলে বোরহান (১৯) ও তার সহযোগীরা উত্ত্যক্ত করছিলেন। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে বোরহান ফোনে অন্যদের ডেকে এনে শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালান। এতে পাঁচ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বরগুনায় বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ভাইকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের ঘটনা ঘটেছে সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা এলাকায়। জানা যায়, বড় লবণগোলা এলাকার স্থানীয় একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে একই এলাকার দুলাল চৌধুরীর ছেলে ইমাম চৌধুরী (১৬) ও আরও কয়েকজন মিলে উত্ত্যক্ত করে আসছে। ছাত্রী তার ভাইকে জানালে ভাই বিষয়টি নিয়ে ইমামের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় ইমাম তাকে হুমকি দেন। পরে মঙ্গলবার বাজারে যাওয়ার পথে ইমাম ও তার সহযোগীরা ছাত্রীর ভাইয়ের পথরোধ করে একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে তাকে পিঠে ও মাথায় আঘাত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) নীলফামারীর ডিমলায় প্রতিবেশী বখাটের হাতে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই দিন দুপুরে শিশুটিকে বাড়িতে রেখে তার মা-বাবা আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নিতে যান। এসময় প্রতিবেশী মোশাররফ হোসেনের ছেলে সুজন ইসলাম (১৫) এবং আমিনুর রহমানের ছেলে আলীনুর ওরফে বুলু বাদশা (১৫) ওই বাড়িতে ঢুকে কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। আত্মীয়ের জানাজা ও দাফন শেষে সন্ধ্যার সময় বাড়িতে এসে মেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন মা-বাবা। তাকে দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ডিমলা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিকে, রোববার (১৬ জানুয়ারি) গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মধ্য ধর্মপুর গ্রামে ১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ওই গ্রামের আব্দুল লতিফের স্ত্রী নুরজাহান প্রতিবেশী শাহ আলমের বাড়ির উঠানে সিদ্ধ ধান শুকাতে দিলে ধান পাহারা দেওয়ার জন্য শিশুকে রেখে বাড়িতে যান। এসময় শাহ আলম ওই শিশুকে ঘরে নিয়ে তার মুখে কাপড় বেঁধে ধর্ষণ করেন। শিশুটি কাঁদতে-কাঁদতে বাড়িতে ফিরে মায়ের কাছে সব ঘটনা খুলে বলে। এ ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) জয়পুরহাটেও পাঁচ বছরের এক শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কালাই উপজেলায় আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হাজিপাড়া গ্রামে শুক্রবার বিকেলে শিশুটির মা দুধ আনার জন্য পাশের বাড়িতে যান। এসময় মেয়েটিকে বাড়িতে একা পেয়ে পাশের বাড়ি জামাই আলিমুদ্দিন বাড়িতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে তার মা দৌড়ে বাড়িতে এলে আলিমুদ্দিন পালিয়ে যান। এ ঘটনায় কালাই থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়াসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় মহিলা পরিষদ। নির্যাতনের শিকার কন্যাশিশুসহ তাদের পরিবারের সদস্যদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে তারা।
সারাবাংলা/আরএফ/সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
জাতীয় মহিলা পরিষদ শিশু ধর্ষণ শিশু নির্যাতন শিশুর প্রতি সহিংসতা