Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কয়লা দেবে না ইন্দোনেশিয়া, সংশয়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:৩০

ঢাকা: প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে কোনো একটি দেশ থেকে কয়লা আমদানি করা। পরে ইন্দোনেশিয়াকে চূড়ান্ত করে দেশটি থেকে কয়লা আমদানির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎই ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, তারা আপাতত কয়লা রফতানি করবে না। এতে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুত শেষ করা গেলেও উৎপাদনে যাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়লার সংস্থান না হওয়ায় এখনই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উদ্বোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন নতুন করে কয়লার জন্য বিকল্প সংস্থান খোঁজা হচ্ছে। ওদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজও কিছুটা বাকি। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চলতি বছরের মার্চে উদ্বোধনের যে দিনক্ষণ ঠিক করা ছিল, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।

১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দ্রুত উৎপাদনে নিয়ে আসতে জোর চেষ্টা ছিল বিদ্যুৎ বিভাগের। সে লক্ষ্যে প্রায় তিন থেকে চার চতুর্থাংশ কাজও দ্রুত শেষ করা হয়। গত ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ করতে সময়ও বেঁধে দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি। বাকি কাজ শেষ করে আগামী মার্চের মধ্যে একটি ইউনিট চালুর পরিকল্পনা করা হয়। নির্ধারিত ডিসেম্বর মাস পেরিয়ে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হয়েছে ৮৯ শতাংশ ও দ্বিতীয় ইউনিটের ৫৭ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও প্রাণঘাতি ওই ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হতে দেরি হওয়ায় নির্মাণ সামগ্রী সব পৌঁছায়নি। যে কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির মাধ্যমে এ সংকট মোকাবিলা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। যে কারণে এই কেন্দ্রটি দ্রুত চালুর পরিকল্পনা করেছিল বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎখাতের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রাথমিকভাবে তিন লাখ টন কয়লা আনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া থেকে ওই কয়লা আমদানির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু দেশটি সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা এই মুহূর্তে কয়লা রফতানি করবে না। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সময়মত চালু করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।

কয়লার জন্য বিকল্প খোঁজার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ইন্দোনেশিয়া কয়লা রফতানি করবে না, সেহেতু অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে।

এদিকে করোনার কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু যন্ত্রাংশ সময়মত পৌঁছাতে পারেনি। যে কারণে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। পাশাপাশি সঞ্চালন লাইনের কাজও শেষ হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ- ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড- বিআইএফপিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আবসার উদ্দীন আহমেদ জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুই ইউনিটেরই প্রধান কাজগুলো শেষ হয়েছে। কিছু আনুষঙ্গিক কাজ এখন বাকি রয়েছে। যদিও তিনি বলেন, বাকি ১১ শতাংশ কাজ শেষ করে আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম ইউনিট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারি- কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠী এলাকায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপরে কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে এটি একটি।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা সই হয়। এরপর ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারিতে দুই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিপিডিবি ও এনটিপিসি যৌথ কোম্পানি গঠন করে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র পায়। ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় ২০১৬ সালের ১২ জুলাই। ইকুইটি বিনিয়োগ সমানভাগে ধরে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট রামপাল বাস্তবায়নে গঠন করা হয় বাংলাদেশ- ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড- বিআইএফপিসিএল।

১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল। বাস্তবায়নকারী কোম্পানি বিআইএফপিসিএলের তথ্য অনুযায়ী কাজ শুরুর তারিখ থেকে ৪১ মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে হবে। সে হিসেবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেই রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষম হয়ে ওঠার কথা। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত আগস্টে এর উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরপর ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে উৎপাদন শুরুর চিন্তা করা হয়। কয়লা আমদানি সংক্রান্ত জটিলতায় তা ঠেকে গিয়ে ২০২২ সালের ২৬ মার্চে। কিন্তু এখনো কয়লার ব্যবস্থা না হওয়ায় মার্চে উদ্বোধনের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

কয়লা দিচ্ছে না ইন্দোনেশিয়া রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর