Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার সংক্রমণ বাড়ায় পোশাক রফতানি নিয়ে উদ্বেগ

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ জানুয়ারি ২০২২ ২২:২৭

ঢাকা: তৈরি পোশাক রফতানি আয়ে দেশ এখন ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। প্রথম ছয় মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি  ২৮ শতাংশের বেশি। তবে বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় রফতানি আয় নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল না হলেও পোশাকের চাহিদা কমার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। কমতে পারে পোশাকের দামও। ক্রেতারা এখন সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। দেখেশুনে বুঝে সামনের দিকে এগুচ্ছেন। ফলে নতুন ক্রয়াদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এমন পরিস্থিতির মধ্যে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তবে তারা এও বলছেন, করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতাও তৈরি হয়েছে পোশাক খাতের। এরই মধ্যে শ্রমিকদের বড় অংশ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের আওয়াতায় এসেছেন। সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যে উৎপাদন ধরে রাখলেই পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হবে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পোশাক খাতের রফতানি আয় ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। অথচ অর্থবছরটি শুরু হয়েছিল নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়ে।

ইপিবি’র তথ্য বলছে, জুলাই মাসে গত বছরের চেয়ে পোশাক খাতে আয় কমে ১১ শতাংশ। এরপর অবশ্য প্রতিটি মাসেই রফতানি আয়ে ছিল ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি। আগস্টে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৪১ শতাংশ, অক্টোবরে ৫৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৩২ শতাংশ ও ডিসেম্বরে ৫২ শতাংশ। সবশেষ ডিসেম্বর মাসে পোশাক খাত থেকে আয় এসেছে ৪০৪ কোটি ডলার। আর মাসটি বাংলাদেশ সব পণ্য মিলিয়ে একক মাস হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের মাইলফলক স্পর্শ করে। সবমিলিয়ে পোশাকে ভর করে দেশের রফতানি আয় এখন বেশ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান সারাবাংলাকে বলেন, দেশের বাইরে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সেখানে আমাদের বিক্রি কমে যেতে পারে। ক্রয়াদেশ বাতিল (অর্ডার ক্যানসেল) হয়ে যেতে পারে। পণ্যের দাম কমে যেতে পারে। এসব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কারখানাগুলো যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, আমরা আবারও সেই নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের মনিটরিং টিম বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করছে।  শ্রমিকদের মধ্যে যেন সংক্রমণ না ছড়ায়, আমরা সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, এখন অর্ডার ভালো আছে। পোশাক খাতে আজ সমস্যা তৈরি হলে তার প্রভাব তিন থেকে চার মাস পরে পড়ে। অর্থাৎ করোনা যে এখন বাড়ছে, এর প্রভাব হয়তো আরও তিন থেকে চার মাস পরে পড়বে।

তিনি বলেন, আমরা রফতানি আয়ে এখন যে সুফল পাচ্ছি, সেটি গত দুই মাস ভালো অর্ডার আসার কারণে। ওমিক্রনের প্রভাব এখনো পড়েনি। এখনো কোনো অর্ডার ক্যানসেল হয়নি। তবে অর্ডারের গতি ধীর হয়ে গেছে। তবে আগে যেমন ক্ষতি হয়েছে, এখন আর সেভাবে ক্ষতি হবে না। কারণ করোনা এখন আর আমাদের জন্য নতুন নয়। সেই অর্থে কোনো দেশই লকডাউনে যাচ্ছে না। তবে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। অর্ডার ক্যানসেল না হলেও গতি স্লো হয়েছে। ক্রেতারা এখন ধীরে চলো এবং দেখে চলো নীতিতে এগুচ্ছে।

তবে নিটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এখনই তেমন কোনো শঙ্কা দেখছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেই মনে করছে সংগঠনটি।

জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, যেসব দেশে আমরা রফতানি করি সেসব দেশে সেই অর্থে এখনো লকডাউন নেই। আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। বায়াররাও নজর রাখছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিকই আছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই। এখন পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশও বাতিল হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম আহসান সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত বায়ারদের কাছ থেকে নেগেটিভ ফিডব্যাক পাইনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি বলেন, কারখানায় শ্রমিকদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিকদের আমরা ভ্যাকসিনের আওয়াতায় আনার ব্যবস্থা চেষ্টা করেছি। এরই মধ্যে শ্রমিকদের বড় অংশ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দিয়ে দিয়েছে। এখন তারা দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছে।

মন্তব্য জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, অর্ডার মোটামুটি আছে। করোনার সংক্রমণ খুব বেড়ে গেলে সেটি কীভাবে মোকবিলা করা হবে তা নিয়ে শঙ্কা আছে। অর্থাৎ করোনার সংক্রমণ নিয়ে ঝুঁকি আছে। তবে এখন পর্যন্ত সার্বিকভাবে অবস্থা খারাপ না। এখন পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্য আমার জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সারাবাংলাকে বলেন, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া পোশাক খাতের জন্যে বিশাল উদ্বেগের ব্যাপার। এখন আমরা যে কাজ করছি তা ছয় মাস আগের। পোশাক রফতানিতে এখন ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। রফতানির ধারা ইতিবাচক রাখতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন। আমাদেরও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কর্মত্রুটি যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। উৎপাদন ঠিক রাখতে হবে। শ্রমিকরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। এই সময়টিতে উদ্যোক্তাদের সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে সালাম মুর্শেদী বলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়লেও এখনো কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল হয়নি। তবে চাহিদা কমে যাওয়ায় পণ্যের দামে দরপতন হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে রফতানি আয় কমার শঙ্কা রয়েছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

করোনার প্রভাব তৈরি পোশাক খাত রফতানি আয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর