এক পরিবারে ৫ জনই প্রতিবন্ধী, পর্যাপ্ত নয় সরকারি সহায়তা
২৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:২৬
খাগড়াছড়ি: মহালছড়িতে এক পরিবারের ৬ জনের মধ্যে পরিবারের কর্তাসহ ৫ জনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। পরিবারটি মহালছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দুর্গম এলাকার চৌংড়াছড়ি রোয়াজাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তারা খুবই অসহায় অবস্থায় অভাব-অনটনের মধ্যে জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয়দের দাবি, সরকারি সাহায্য হিসেবে যে ভাতা এই পরিবারকে দেওয়া হয় তা, তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। আরও সহযোগিতা না পেলে পরিবারটিকে রক্ষা করা যাবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার মহালছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত চৌংড়াছড়ির রোয়াজাপাড়া গ্রামের পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটি ছোট ঘর। পাশেই রান্নার ঘর। বাঁশের বেড়া স্থানে স্থানে ভাঙ্গা। ঘরের অসহায় বাসিন্দা নিংপ্রু চাই মারমা ও আরেমা মারমা।
এই দম্পতির কোল জুড়ে জন্ম নিয়েছিলো ১ মেয়েসহ ৫ সন্তান। অভাবের হলেও ৫ সন্তানকে নিয়ে সংসারে সুখী ছিলেন এই দম্পতি। সন্তানরা বেড়ে ওঠছিলো স্বাভাবিক ভাবে। কিন্তু ছেলেদের বয়স ৮ থেকে ১০ বছর হলেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। প্রথম ছেলে উচিমং মারমা ৮ বছর বয়সে অসুস্থ হলে তাকে মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পর ভালো হয়ে ওঠে। পরে হঠাৎ অজ্ঞাত রোগে আস্তে আস্তে তা হাত-পা শুকিয়ে যায়।
এমনি করে আস্তে আস্তে তার আরও ৩ সন্তানের একই অবস্থা হয়। বর্তমানে সন্তানদের মধ্যে উচিমং মারমা (১৮), থুইচানু মারমা (১৫), থুইসাচিং মারমা (১২), সুইসাচিং মারমা (৯) সবাই শারিরীক প্রতিবন্ধী। শুধু তাই নয় এক দুঘর্টনায় আঘাত পেয়ে পরিবারের প্রধান কর্তা নিংপ্রুচাই মারমা সে নিজেও শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় পরিবারটি এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে।
নিংপ্রুচাই মারমার স্ত্রী আরেমা মারমা জানান, বর্তমানে তাদের পরিবারের ৬ জনের মধ্যে তিনি বাদে সবাই শারিরীক প্রতিবন্ধী। এই অবস্থায় তারা খুব কষ্টে আছেন। তার স্বামীও কাজ করতে পারেন না। তিনি নিজে শারিরীক প্রতিবন্ধী ছেলেদের সেবা যত্ন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ে চলছেন তারা। কিন্তু সেসব সহয়তা খুবই কম।
স্থানীয়রা জানান নিংপ্রুচাই মারমার পরিবার যদি সরকারের কোন সহযোগিতা না পায় তাহলে পরিবারটি নিঃশেষ হয়ে যাবে।
রোয়াজা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মংচিং উ মারমা জানান, নিংপ্রুচাই এর ৪ ছেলে তাদের স্কুলে পড়তো। পর্যায়ক্রমে তারা পঙ্গু হয়ে পড়ায় স্কুলে আসতে পারে না। নিরুপায় হয়ে তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করতেছে। স্থানীয়ভাবে বিত্তবানেরা এবং সরকারি সহযোগিতা আরও না বাড়ানো হলে পরিবারের সব সদস্যকে না খেয়ে মরতে হবে।
মহালছড়ির রোয়াজা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক বসুদেব চাকমা বলেন, ‘এক পরিবারের প্রায় সবাই কর্মহীন। এলাকাবাসী তাদের দেখে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। তাদের জন্য স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহন একমাত্র সরকার নিতে পারে।’
অসহায় পরিবারের কর্তা নিংপ্রু চাই মারমা জানান, তার ২ ছেলে আগে প্রতিবন্ধী হয়েছে, পরে আরও ২ জনও পঙ্গু হয়ে যায়ে। নিজের কোনো জায়গা নেই। সরকারি খাস জায়গায় থাকেন এবং সরকারের সহযোগিতায় বেঁচে আছেন। তিনি আরও সরকারি সাহায্য প্রত্যাশা করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকতা মো. শাহাজাহান জানান, তারা যখন তাদের কাছে প্রথম আসে, তখন তারা চিকিৎসা করিয়েছেন। তারা নিয়মিত আসতে না পারার কারণে তাদের অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তাদের রোগ হচ্ছে বিরল। তিনি আশা করেন সিভিল সার্জনসহ মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা করা হয় তাহলে হয়ত তারা এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে।
খাগড়াছড়ির ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মিটন চাকমা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিলো না। তবে যেহেতু বিষয়টি জানা গেছে, শিশু ও মেডিসিন বিশেজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’
সারাবাংলা/এমও
এক পরিবার প্রতিবন্ধী মহালছড়ি শারীরিক প্রতিবন্ধী সরকারি সহায়তা