ছুটির দিনের ভিড়ে বিক্রেতাদের মুখে হাসি, স্বাস্থ্যবিধি উধাও
২১ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৫৩
বাণিজ্যমেলা থেকে: সপ্তাহ তিনেক সময় পেরিয়ে জমে উঠেছে রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে চলমান ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ) ২০২২। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যেন মানুষের ঢল নেমেছিল এই মেলায়। তাতে বিক্রেতাদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকার যখন নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করছে, তখন ছুটির দিনে মেলার জনস্রোতে ভেসে গেছে স্বাস্থ্যবিধি।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বাণিজ্যমেলায় অবস্থান করে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই বলছেন, এদিন লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে মেলায়। তবে মেলায় অবস্থানকালে তাদের কাউকেই তেমন একটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি। মাস্কও দেখা যায়নি অনেকের মুখে। করোনাভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ সপ্তাহের ব্যবধানে লাফিয়ে লাফিয়ে ৪ হাজার থেকে ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও মেলায় আসা কারও মধ্যেই এ নিয়ে কোনো হেলদোল দেখা যায়নি।
মেলা ঘুরে দেখা গেল, বাণিজ্যমেলায় বিক্রেতাদের মধ্যেই নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা। স্টলগুলোতে যারা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন, তাদের মাস্ক থাকলেও সেটি নেমে এসেছে থুতনিতে। কেউ কেউ তো মাস্ক খুলেই কথা বলছেন ক্রেতাদের সঙ্গে।
স্বাস্থ্যবিধির বালাই না থাকলেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে অবশ্য অধিকাংশ বিক্রেতার মুখেই হাসি। সে কথা বললেন রিঙ্কো রুটি মেকার প্যাভিলিয়নের কর্মী হাসানও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরু থেকেই মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল কম। কয়েকদিন হলো একটু একটু বাড়ছে। আজ ক্রেতার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বেড়েছে।’ এই স্টলে বড় রুটি মেকার আড়াই হাজার টাকা, মাঝারি রুটি মেকার ২ হাজার টাকা ও ছোট রুটি মেকার দেড় হাজর টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাসান বলেন, ‘আজ ভালো বিক্রি হয়েছে। বাকি দিনগুলোতেও এমন বিক্রি হলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা ভালো হবে।’
স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেন— এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ। কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায়? কথা বলতে গেলে তো মাস্ক খুলতেই হয়। মানুষের ভিড়ে অনেক জোরে জোরে কথা বলতে হয়। মাস্ক পরে সম্ভব হয় না। তবে আমরা সচেতন।
ওই প্যাভিলিয়নেই কথা হয় গাজীপুর থেকে মেলায় যাওয়া পুষ্পর সঙ্গে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়জনের মুখে মাস্ক আছে বলেন? পুরো মেলায় কী পরিমাণ ভিড়! সেখানে মাস্ক পরে থাকাটাও তো কষ্টের। আমরা ভ্যাকসিন নিয়েছি। নিজেরা সচেতন থাকলে করোনায় কিছুই হবে না।
মেলার কয়েকটি স্টলে দেখা গেল ব্লেজারে চলছে বিশাল অফার। কথা হয় একটি ব্লেজারের দোকানে মালিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ২০ দিনে মেলায় ভালো বিক্রি হয়নি। আজ সকাল থেকে বিক্রি ভালো। প্রতিটি ব্লেজার ১৩০০ টাকা, ১৫০০ টাকা ও ১৮৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দামে কম মানে ভালো— এটাই আমাদের স্লোগান।
স্বাস্থ্যবিধি কি মানছেন?— এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা মেলায় এসেছি সবাই ভ্যাকসিন নিয়েছি। মেলায় গত ২০ দিনে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। সমস্যা হলে তো এতদিনে আমরা অসুস্থ হয়ে যেতাম। এখন নিজেরা সচেতন আছি।’ সচেতন থাকলে মাস্ক নেই কেন— জিজ্ঞাসা করতেই তার জবাব, ‘ভাই, ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলি।’
মেলায় এরকম অনেক স্টল ঘুরেই দেখা গেল, স্টলের কর্মী কিংবা ক্রেতা-দর্শনার্থী— সবাই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়ে উদাসীন। তবে মুখে মুখে সবাই নিজেদের সচেতন দাবি করছে ছাড়ছেন না।
এদিকে, মেলায় মিঠাই প্যাভিলিয়নে চলছে নানা ধরনের অফার। সেখানকার বিক্রয়কর্মীরা ক্রেতাদের চাপে কথা বলার সময়ও পাচ্ছেন না। ওই প্যাভিলিয়নেও ক্রেতা-বিক্রেতা কাউকেই স্বাস্থ্যবিধি তেমন মানতে দেখা গেল না।
মেলায় ওয়ালটন, যমুনা, আরএফএল, ব্রাদার ফার্নিচার, আখতারস ফার্নিচার, ইগলুসহ অন্যান্য প্যাভিলিয়নেও ক্রেতাদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনের এই ভিড়ে অনেক স্টল আর প্যাভিলিয়নের কর্মীরাই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার ফুসরত পাচ্ছেন না।
এদিকে, মেলার প্রবেশপথ থেকে শুরু করে মেলার ভেতরেও বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মেলায় ঘোরাঘুরি করতে বলা হচ্ছিল আয়োজকদের পক্ষ থেকে। কিন্তু ওই বলা পর্যন্তই, সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়নি কারও মধ্যেই।
মেলায় দর্শনার্থীদের এই চাপের কারণে বাণিজ্যমেলায় যাতায়াতের পথেও দীর্ঘ যানজটে নাকাল হতে হয়েছে। মেলায় যারা ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া গিয়েছেন, তাদের সন্ধ্যা থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিআরটিসি বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিকেল নাগাদ মেলা প্রাঙ্গণের চারপাশেই যানজট তীব্র শুরু করে। এমনকি যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গিয়েছেন, তারাও মেলা প্রাঙ্গণ থেকে কাঞ্চন ব্রিজসহ আশপাশে পুরো এলাকার পেয়েছেন যানজট।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর
উপচে পড়া ভিড় ছুটির দিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলা বাণিজ্যমেলা