বন্ধুকে নিয়ে গলা টিপে শিমুকে হত্যা— আদালতে স্বামীর স্বীকারোক্তি
২২ জানুয়ারি ২০২২ ০০:০০
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর স্বামী নোবেলের বন্ধু ফরহাদ। দুই বন্ধুর সম্পর্ক প্রায় ৪০ বছরের। গত ১৬ জানুয়ারি বন্ধু ফরহাদ আসেন নোবেল বাড়িতে। ওই সময় শিমু-নোবেলের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। এক পর্যায়ে শিমুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন নোবেল। পরে ফরহাদকে পাশের রুম থেকে ডেকে দুই বন্ধু মিলে শিমুকে গলা টিপে হত্যা করেন।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথাই বলেছেন নোবেল ও ফরহাদ। দুপুরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হুমায়ুন কবির এ তথ্য জানিয়েছেন।
হুমায়ুন কবির বলেন, দাম্পত্য কলহের জের ধরেই নোবেল হত্যা করেন শিমুকে। আর তাকে ওই সময় প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন বন্ধু ফরহাদ। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা নিজেরাই এসব কথা বলেছেন। আদালত জবানবন্দি নিয়ে তাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, ১৬ জানুয়ারি সকালে নোবেলের গ্রিন রোডের বাসায় হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। আমাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জনেই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। প্রথমে আমরা জেনেছিলাম, তার বাল্যবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছে। তবে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা আমাদের কাছে দু’জনে মিলেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার তথ্য স্বীকার করেছে। এরপর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও সে কথা জানিয়েছে।
আরও পড়ুন-
- ‘চিত্রনায়িকা শিমুকে শ্বাসরোধে হত্যা’
- অভিনেত্রী শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার
- শিমু হত্যাকাণ্ড: স্বামী নোবেলের দোষ স্বীকার
- দাম্পত্য কলহের জেরে চিত্রনায়িকা শিমুকে হত্যা
- নায়িকা শিমু হত্যা: বন্ধুসহ স্বামী নোবেল ৩ দিনের রিমান্ডে
- শিমুর স্বামী ও চালককে নিয়ে অভিযানে র্যাব, গাড়িতে রক্তের ছাপ
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ফরহাদ নোবেলের বাল্যবন্ধু। প্রায় ৪০ বছরের সম্পর্ক তাদের। ফরহাদ ছিলেন বেকার। মাঝে মধ্যে তিনি নোবেলের কাছ থেকে টাকা নিতেন। ১৬ জানুয়ারি সকালে ২ হাজার টাকা ধার নিতে ফরহাদ উপস্থিত হন নোবেলের বাসায়। তিনি ড্রয়িং রুমে বসেছিলেন। এরই মধ্যে পাশের বেডরুমে নোবেল ও শিমুর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার আওয়াজ শুনে ফরহাদ ড্রয়িং রুম থেকে বেড রুমে যান। ওই সময় মেজাজ হারিয়ে শিমুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন নোবেল। সেখানে ফরহাদ উপস্থিত হলে নোবেল তাকে সহায়তা করতে বলে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ফরহাদ ছিলেন নোবেলের বাধ্যগত। এজন্য তিনি নোবেলের কথা অনুযায়ী শিমুকে চেপে ধরেন। এরপর দু’জনে মিলে গলাটিপে হত্যা করেন শিমুকে।
শিমু-নোবেলের দাম্পত্য কলহের কারণ কী ছিল— সাংবাদিকরা জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, একটি পরিবারে সমস্যা থাকতেই পারে এই মুহূর্তে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা তদন্ত করে দেখছি তাদের মধ্যে কী নিয়ে কলহ ছিল। আমাদের তদন্ত চলছে। এ হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখছি। কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে শিমুর ব্যবহৃত গাড়িতে মরদেহ তোলা হয়। এরপর সেই গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন দু’জন (নোবেল ও ফরহাদ)। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও গাড়ি থেকে লাশ ফেলার সুযোগ পাননি। পরে তারা আবার গ্রিন রোডের বাসায় চলে যান। সন্ধ্যায় আবার গাড়ি নিয়ে বের হন। ঘুরতে ঘুরতে রাত সাড়ে ৯টা দিকে কেরানীগঞ্জের হযরতপুরের আলীপুর ব্রিজের কাছে মরদেহটি ফেলে দেন। পরদিন (১৭ জানুয়ারি) সকালে বস্তাবন্দি অবস্থায় অজ্ঞাত মরদেহ হিসেবে সেটি উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহ থেকে ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের সহায়তায় তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া।
সারাবাংলা/টিআর