‘শপথবাক্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’
২২ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৪১
ঢাকা: শপথবাক্য পাঠ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনায় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ‘ঐতিহাসিক সত্য’কে অস্বীকার, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ও ‘সংবিধান’র সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। শনিবার (২২ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান তিনি।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ফসল। স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লড়াইয়ে অর্থাৎ ‘সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে’ বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ঐতিহাসিক বাস্তবতায় তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রবাসী সরকার নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ‘ঐতিহাসিক সত্য’ এবং অন্যান্যদের ‘ঐতিহাসিক অবদান’কে অস্বীকার করে এক রৈখিক ভুল ইতিহাস উপস্থাপন করে তরুণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তির শিকলে আবদ্ধ করা কোনোক্রমেই ন্যায়সঙ্গত নয়। সরকারের ইচ্ছামাফিক কোনো ‘প্রেস নোট’ বা ‘সার্কুলারে’ বাঙালির সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রচিত হতে পারে না।”
তিনি বলেন, “সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ও বঙ্গবন্ধুর নামেই আমরা যুদ্ধ করেছি, ‘মুজিব বাহিনী’ বা বিএলএফ গঠন করেছি। স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের দীর্ঘ লড়াইয়ে যার যা অবদান এবং আত্মত্যাগ রয়েছে তা স্বীকার না করলে বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা বিনষ্ট হয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সবাইকে অস্বীকারের সরকারি সংস্কৃতি কোনোক্রমেই ঐতিহাসিকতাকে ন্যায্যতা দেয় না। দলগতভাবে আওয়ামী লীগের যা আদর্শ তা জাতির জন্য বাধ্যতামূলক হতে পারে না এবং বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। শপথ পাঠে দলীয় আদর্শ গ্রহণের ‘বাধ্যবাধকতা’ সৃষ্টি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরল, এমনকি রাজতন্ত্রেও নেই।”
রব বলেন, “দেশে আজ যেখানে বিভিন্ন পদে অবস্থানরত দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ অহরহ শপথ ভঙ্গ করেছেন সেখানে কোমলমতি শিশুদেরকে শপথ গ্রহণের ন্যায় উচ্চমাত্রার বিষয় সংযোজন করে শপথকে খেলো বিষয়ে পরিণত করা হচ্ছে। এতে শিশুদের ‘আত্মমর্যাদা’ প্রতিষ্ঠায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এবং ‘নৈতিক দায়বদ্ধতা’ বিনষ্ট হবে। বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’র ভিত্তিতে। এই ত্রয়ী আদর্শ বাংলাদেশ সৃষ্টির দার্শনিক ভিত্তি। যখন বাংলাদেশ থেকে ‘গণতন্ত্র’, ‘আইনের শাসন’ ও ‘ভোটাধিকার’ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তখন গণতন্ত্রবিহীন অপসংস্কৃতিকে বর্তমান প্রজন্মের মাঝে বিস্তার করার দুরভিসন্ধি কোনোক্রমে গ্রহণীয় নয়।”
তিনি বলেন, “তৃতীয় জাগরণের পর্যায়ে এই ধরনের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’র বিকাশকে অবরুদ্ধ করে ফেলবে। যা জাতির জন্য আত্মঘাতী। মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীরদের রাষ্ট্রপরিচালনার ভাবাদর্শ গ্রহণ বাধ্য করা যায় না। এ পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ‘শপথ’ নেওয়ার তাত্ত্বিক (Theoretical judgement) বা ব্যবহারিক বিচারের (Practical judgement) যোগ্যতাও গড়ে ওঠে না। সর্বোপরি, কেউ যদি শপথ গ্রহণে অস্বীকার করে, তাহলে জোর করে তার ‘সম্মতি’ আদায় করা যাবে না। এসব নির্দেশনা কোনোক্রমেই সুবিবেচনাপূর্ণ নয়।”
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার- এই ত্রয়ী আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বিনির্মাণ এবং উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে জাতীয় মনন ও আত্মবিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করাই হবে আজকের জরুরি কর্তব্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শপথবাক্য পাঠের অপরিপক্ক ও অনৈতিক নির্দেশনা দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম