Sunday 27 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গোপাল মুহুরী হত্যা: দেড়যুগ পর ‘শিবির ক্যাডার’ মহিউদ্দিন গ্রেফতার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:১০ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৫৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলা অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, নিম্ন আদালতে হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণার পর দুবাই পালিয়ে গিয়েছিল মহিউদ্দিন। দেড়যুগ পর দেশে ফেরার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিক এলাকা থেকে মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

গ্রেফতার মহিউদ্দিন ওরফে মহিনউদ্দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনি গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে। দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাব-৭ এর হাটহাজারি ক্যাম্প কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০০৩ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ হত্যা মামলার রায়ে মহিউদ্দিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার পর সে পালিয়ে দুবাইয়ে চলে যায়। ১৮ বছর পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর সে দেশে ফিরে আসে। আজ (রোববার) রাতের ফ্লাইটে মহিউদ্দিনের আবারও দুবাই চলে যাওয়ার কথা ছিল। শনিবার করোনার সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য সে নমুনা দিয়েছিল। দুবাইয়ে ফেরত যাবার আগেই আমরা তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।’

বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান এলাকায় বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে গুলি করে নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল মুহুরীকে হত্যা করে। সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শে বিশ্বাসী গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী আমৃত্যু রাশেদ খান মেননপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই শিক্ষককে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

ঘটনার দিনই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং খাদ্যমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান মুহুরীর বাসায় যান। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবীণ বিপ্লবী (পরে প্রয়াত) বিনোদ বিহারী চৌধুরীর তোপের মুখে পড়েন এবং দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেন। বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসার পর উত্তেজিত জনতা দুই মন্ত্রীকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক হলে দুই মন্ত্রীকে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরায় ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন অডিট কর্মকর্তা উমা মুহুরী বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে চার আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ আসে। একই রায়ে আরও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। চার জন খালাস পান।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন— শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নাছির ওরফে গিট্টু নাছির, আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্ট্যা আলমগীর ও তছলিমউদ্দিন মন্টু। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল, মো. শাহজাহান, মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন (পলাতক) ও হাবিব খানকে (পলাতক)। খালাস পান নাজিরহাট কলেজের অধ্যাপক মো. ইদ্রিছ মিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক মো. জহুরুল হক, অধ্যাপক তফাজ্জল আহম্মদ ও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাসির।

২০০৪ সালের জুনে নিজ বাসায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন সাইফুল। ২০০৫ সালের মার্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাছির ওরফে গিট্টু নাছির র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

২০০৬ সালের ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির ওপর রায় দেন। এতে আজম, আলমগীর কবির ও তছলিমউদ্দিন মন্টুর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। বিচারিক আদালত থেকে খালাস চার জনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন বাদি উমা মুহুরী। সেই আপিল খারিজ হয়েছিল।

২০০৮ সালে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলমগীর আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। আর দু’জন তসলিম উদ্দিন মন্টু ও আজম ২০০৬ সালে জেল পিটিশন করেন। ২০২০ সালে আপিল বিভাগ তিন আসামির সাজা কমিয়ে অমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন।

সারাবাংলা/আরডি/আইই

গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর