Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসাদের আত্মাহুতি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যাত্রাপথ নির্ধারণ করেছিল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৪৮

ঢাকা: ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে আসাদের আত্মাহুতি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যাত্রাপথ নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আসাদকে টার্গেট করে পুলিশের ডিএসপি বাহাউদ্দিন গুলি চালালেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার কোনো বিচার হয় নি। আসাদ হত্যার বিচার করতে না পারাটা জাতি হিসেবে আমাদের বিরাট ব্যর্থতা।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত শহিদ আসাদ দিবস উপলক্ষে ‘শহীদ আসাদ পরিষদ’ এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

শহীদ আসাদ পরিষদের আহ্বায়ক ড. মাহবুব উল্লাহ’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দীন স্বপন, শহিদ আসাদের ভাই নুরুজ্জামান, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।

ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘আসাদ শহিদ হয়েছিলেন ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি। তিনি মিছিলে অংশ নিয়ে শহিদ হননি। তাকে টার্গেট করে গুলি চালানো হয়েছিল। গুলি কে চালিয়েছিল- সেটাও আমরা জানি। গুলি চালিয়েছিল ডিএসপি বাহাউদ্দিন। তার বাড়ি ছিল পাবনায়।’

‘এরপর তো দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা কখনো শুনি নাই যে, ডিএসপি বাহাউদ্দীনের বিচার হওয়া উচিত। এটা আমাদের বিরাট ব্যর্থতা’- বলেন মাহবুব উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার সব ধরনের গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এক ফর্মুলায় হয় না। আসাদ যেদিন শহিদ হলেন সেদিন বিকেল ৩ টায় মৌন শোভাযাত্রার আয়োজন করা হলো। সেই মৌন শোভাযাত্রায় হাজার হাজার ছাত্র/ছাত্রী অংশগ্রহণ করেছিল। রাস্তা দিয়ে কালো পতাকা নিয়ে, নীরবে দৃপ্ত পদভারে ছাত্র/ছাত্রীরা এগিয়ে গেছে। কেউ কান্নায় ফেটে পড়েনি। জোরে স্লোগান দেয় নি, চিৎকার করে নি। সবাই নীরবে এগিয়ে গেছে। সেই নীরবতা লাখ-কোটি চিৎকারের চেয়েও শক্তিশালী।’

বিজ্ঞাপন

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ঢাকার আন্দোলনের খবর জানতাম না। শহিদ আসাদের ঘটনা আমি কাছ থেকে দেখি নি। কিন্তু যখন কবি শামসুর রাহমানের ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটা পড়ি, তখন শিউরে উঠি। এক ধরনের শিহরণ জাগে। সত্যি সত্যি ‘আসাদের শার্ট’ তখনকার ভবিষ্যতের যাত্রাপথ নির্ধারণ করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘একটা আন্দোলনের মধ্যে যখন আপনি থাকেন, তখন ওই আন্দোলনটা যেমন করে বোঝেন, বোঝেন দূরে থেকে এরকম করে বোঝা যায় না। এই জন্য আমি প্রায় সময়-ই বলি বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের কথা মতো যদি রাজনীতি চলত তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। পণ্ডিতরা ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন, বর্ণনা করেন। পলিটিশিয়ানরা ওই ইতিহাস বদলায়। যিনি বর্ণনা করেন, তিনি বর্ণনার মধ্যেই থাকেন। বদলাবার মানুষ তারা, যারা রাস্তায় থাকে। ওই রাস্তায় আসাদ ছিলেন, মাহবুব উল্লাহ ছিলেন, নুরুজ্জামান (শহিদ আসাদের ভাই) ছিলেন। কিন্তু আমি ছিলাম না। ফলে আমি ওরকম করে বলতে পারব না।’

মান্না বলেন, ‘একজন পুলিশ অফিসার এসে সরাসরি পিস্তল দিয়ে গুলি করে আসাদকে হত্যা করল! ঊনসত্তরের পরে দেশ বদলে গেল, ইতিহাস বদলে গেল, এই ঘটনার কোনো তদন্ত হলো না? কেন, কাদের হাতে অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম আমরা? কীভাবে গেল? এই নেতৃত্ব কমরেড মাহবুব উল্লাহ’র হাতে নেই, তোফায়েল আহমেদের হাতে কেন গেল? আমি তোফালে আহমেদকে অযোগ্য বলছি না। তোফায়েল আহমেদ তো আজ আসাদকে নিয়ে কোনো আলোচনার মধ্যে নেই। উনি থাকতে পারেন না। কেন পারেন না? হয়তো উনার মন আছে। কিন্তু আসতে পারেন না।’

‘আমাদের দলগুলো এমন কেন হয়ে গেলে? এমন একটা লাইন বেঁধে দিল যে, ওই লাইনের বাইরেই যাওয়া যাবে না। তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, বেগম মতিয়া চৌধুরী যদি এসে আসাদ দিবসে কথা বলেন তাহলে তাদের চাকরি চলে যাবে? যদি তাই হয় এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেন কেন?- বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

শওকত মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের চলমান রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর নির্ভর করে আমরা কোন দিবসটি পালন করব। যখন জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের সখ্য থাকে তখন আমরা ৬ ডিসেম্বর পালন করি না। জাতীয় পার্টি যখন আমাদের কৌশলগত মিত্র হয়, তখন আমরা এরশাদকে, স্বৈরাচারকে ভুলে যেতে বসি।’

তিনি বলেন, ‘শহিদ আসাদ সেই গণঅভ্যুত্থানের নায়ক, যার হত্যাকাণ্ড গণঅভ্যুত্থানকে একটা স্ফুলিঙ্গ হিসেবে প্রবাহিত করেছিল এবং যার ফসল ঘরে তুলেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগ এখন শহিদ আসাদকে স্মরণ করে না। আমরা স্মরণ করি একটা অসহায়ত্ব থেকে, আমরা স্মরণ করি আমাদের ভবিষ্যতের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা হিসেবে।’

শওকত মাহমুদ বলেন, ‘শহিদ আসাদ কোনো কিছু পাওয়ার আসায় বা এমপি-মন্ত্রী হওয়ার আসায় ঘর থেকে বের হন নি। তিনি লেনিন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্ট্যালিন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সারাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক, খেয়ে-পরে বেঁচে থাকুক, স্বাধীনতার চর্চা করুক- এটাই তিনি চেয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘শহিদ আসাদ যে পরিস্থিতিতে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, সেই পরিস্থিতির চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি খারাপ পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে আছে। আজ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের চর্চা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদ আমরা দেখছি, পরিচিত হচ্ছি এবং আক্রান্ত হচ্ছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নায়কের একাংশ এখন ফ্যাসিস্ট হয়ে গেছে। এখন মেনন ভাই, মতিয়া আপা ফ্যাসিজমের পক্ষে, মতপ্রকাশের বিপক্ষে এবং জুলুমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

আসাদ মাহমুদুর রহমান মান্না শহিদ আসাদ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর