ইসি গঠনে খসড়া আইন ও সার্চ কমিটির জন্য প্রজ্ঞাপন অভিন্ন: সুজন
২৪ জানুয়ারি ২০২২ ০০:১৬
ঢাকা: ইসির খসড়া আইনটির সঙ্গে সার্চ কমিটির জন্য ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পার্থক্য নেই বললেই চলে। কত সদস্যের কমিটি গঠিত হবে, কমিটির সদস্য কারা হবেন, কমিটির ওপর অর্পিত দায়িত্ব, কমিটির কার্যদিবস, কমিটির কোরাম গঠন, প্রতিপদের বিপরীতে সুপারিশকৃত নামের সংখ্যা, সাচিবিক সহায়তা— এই বিষয়গুলি প্রস্তাবিত খসড়া এবং ২০১৭ সালের প্রজ্ঞাপনে অভিন্ন বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য এসব কথা বলা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
এতে আরও বলা হয়, ‘২০১৭ সালের প্রজ্ঞাপন এবং মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়ার তুলনামুলক বিশ্লেষণ থেকে এটি পরিষ্কার যে, এটা ঠিক নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন নয়, অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আইন। অনুসন্ধান কমিটি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাকে আইনি মোড়ক দেওয়াই যেন এর উদ্দেশ্য।’
লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার বলেন, ‘সরকারের খসড়ায় সময় রাখা হয়েছে মাত্র ১০ কার্যদিবস। এত স্বল্প সময়ে কমিটি কীভাবে অনুসন্ধান ও যাচাই প্রক্রিয়া সম্পাদন করবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। সরকার প্রস্তাবিত খসড়ায় অনুসন্ধান কার্যক্রম রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।’
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। বক্তব্য দেন সুজনের নির্বাহী সদস্য বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ প্রমুখ।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলেও বিতর্কিত নির্বাচন ঠেকাতে পারে। নির্বাচনে বিতর্কের সম্ভাবনা দেখা দিলে নির্বাচন স্থগিত করতে পারে, এমনকি তদন্ত সাপেক্ষে ফলাফলও বাতিল করতে পারে। সরকারের আইনে বলা হয়েছে কমিটি পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দল থেকে আহ্বান করবে। নাম আহ্বান করাই কি অনুসন্ধান?’
তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে আইনমন্ত্রীর কাছে আমাদের খসড়ার কপি দিলে গেলে উনি সময় নেই বললেন। এখন কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই আইন পাসের জন্য তড়িঘড়ি করছেন। তাদের মতো করে নির্বাচন করার জন্যই আলোচনা না করে এই আইন করা হচ্ছে।’
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আসীন হয়েছেন তারা সরকারের প্রতি কোনো না কোনোভাবে সহানুভূতিশীল। তাদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হলে কী সার্চ করবেন? আর দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবেন। স্বীয় বিবেচনায় কাউকে মনোনীত করার ক্ষমতা সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে দেয়নি। বোঝাই যাচ্ছে, মনোনয়ন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই আসবে। এটি হবে একটি পক্ষপাতদুষ্ট সার্চ কমিটি। তারা যে নামগুলো প্রস্তাব করবে তা জানার সুযোগ থাকছে না। সরকার নির্ধারিত সার্চ কমিটি দিয়ে সরকার নির্ধারিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠিত হবে। এতে অবশ্য আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কতৃত্ববাদীরা এমনভাবে নির্বাচন করে যাতে তারা জয়ী হয়। এতদিন আমরা আইন করার কথা বলতাম, এখন আইন করে দিচ্ছে। আমাদের সাথে লুকোচুরি করার জন্যই এই আইন করা হচ্ছে। লুকোচুরি করা তো আইনের উদ্দেশ্য হতে পারে না।’
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই আইনের ফলে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের ওপর কি কোনো প্রভাব ফেলবে? আমরা কমিশনে থাকাকালীন যে খসড়াটি প্রস্তাব করেছিলাম সেখানে বলা ছিল– সুপারিশকৃত নামগুলো প্রথমে সংসদের বিশেষ কমিটিতে যাবে, সেখানে আলোচনা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। এই কমিটিতে সবদলের সমানুপাতিক অংশগ্রহণ থাকে। তা হলে প্রধামন্ত্রীর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা কম থাকে।’
এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘বারবার শুনে আসছি আইন করার সময় নেই, এখন করা যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপেও রাষ্ট্রপতি বলেছেন সময় নেই। এরপর হঠাৎ কী পরিবর্তন হয়ে গেল! মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদন হয়ে গেল! এখন আদালতে যাওয়ার নাগরিক অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম