উড়োজাহাজ রূপে আকাশে উড়ে এক শহর থেকে আরেক শহরের বিমানবন্দরে অবতরণ—সহসা রূপ পরিবর্তন। বিমান থেকে গাড়িতে রূপান্তরিত হয়ে শহরের অন্য প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে যাত্রীকে। ভবিষ্যতের গাড়ির রূপরেখা অনেকটা এমনই। এবার এ ধরনের এক বাহন সরকারি ছাড়পত্র পেয়েছে। গাড়িটি আকাশে ওড়ার অনুমোদন পেলেও এটি চালাতে প্রয়োজন হবে লাইসেন্সধারী পাইলট।
সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ছোট উড়োজাহাজে রূপান্তরিত করতে সক্ষম একটি গাড়ির ফ্লাইট টেস্ট করেছে স্লোভাকিয়া কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট করে ছাড়পত্র পেয়েছে যানটি। দ্বৈত ধরনের যানটির নির্মাতা কোম্পানি ক্লেইন ভিশন এ তথ্য জানিয়েছে।
ক্লেইন ভিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৭০ ঘণ্টার কঠোর ফ্লাইট টেস্টের পর স্লোভাক সরকারের পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়েছে। দ্বৈত ধরনের বাহনটি আকাশে ওড়ারও অনুমোদন পেয়েছে।
সিএনএন’র খবরে বলা হয়, পরীক্ষার জন্য বাহনটিকে ২০০ বারেরও বেশি উড্ডয়ন ও অবতরণ করানো হয়। ইউরোপীয় এভিয়েশন সেফটি এজেন্সির (ইএএসএ) নির্ধারিত মান নিশ্চিত করেছে এয়ার কারটি।
ক্লেইন ভিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সকল মান ওই পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। চ্যালেঞ্জিং ওই পরীক্ষায় গাড়িটি বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে।
ক্লেইন ভিশনের এক মুখপাত্র সিএনএন’কে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ বাহনটি আকাশে ওড়ার যোগ্য বলে ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে হাইব্রিড গাড়িটি উড়াতে হলে পাইলট লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে।’ তিনি জানান, তার কোম্পানি আগামী ১২ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ‘এয়ার কার’ উৎপাদনে যাবে।
নির্মাতা কোম্পানি ক্লেইন ভিশন জানিয়েছে, এয়ার কারটিতে ১.৪এল বিএমডব্লিউ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এ গাড়ির জ্বালানি হিসেবে সাধারণ গাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস ব্যবহার করা যাবে।
যানটি সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। এর আগে গত জুন মাসে যানটি স্লোভাকিয়ার নিত্রা শহর থেকে ব্রাতিস্লাভা শহরে ৩৫ মিনিটের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করে। অবতরণের পর উড়োজাহাজ থেকে গাড়িতে রূপান্তর হয় এটি। পরে বিমানবন্দর থেকে চালিয়ে যানটিকে শহরে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্লোভাকিয়ায় ছাড়পত্র পাওয়ায় এ ধরনের বাহন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। টেস্ট ফ্লাইটের পাইলট স্টেফান ক্লেইন বলেন, ‘এয়ার কার হিসেবে ছাড়পত্র পাওয়ায় এরকম গাড়ির ব্যাপক ব্যবহারের পথ খুলে গেল।’
এদিকে রয়্যাল অ্যারোনটিক্যাল সোসাইটির এয়ারওয়ার্ডিনেস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিশেষজ্ঞ গ্রুপের চেয়ারম্যান কিরিয়াকোস কৌরোসিস সিএনএন’কে এ ব্যাপারে বলেছেন, এ ধরনের যানকে এর আগেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এবারের গাড়িটির নির্মাতা কোম্পানির যদি ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য থাকে, তাহলেই কেবল এ ধরনের যান বাজারে আসতে পারে। কৌরোসিস পূর্বাভাস দিয়ে বলেন, এ ধরনের এয়ার কারের মতো বাহন একদিন হেলিকপ্টারের বিকল্প হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে আমরা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চালিত বা কমপক্ষে হাইব্রিড ইঞ্জিনের গাড়ি দেখতে পাব, যেগুলো এভাবে রূপান্তরিত হতে পারবে। এ ধরনের বাহন আমাদের পরিবেশগত টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে।’