উপকূলীয় অঞ্চলে সংরক্ষণ হবে বৃষ্টির পানি
২৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৪৬
ঢাকা: দেশের উপকূলীয় ১০টি জেলার ৪৪টি উপজেলার ২২২টি ইউনিয়নের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৯৬১ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবনাক্ততা বৃদ্ধি-আর্সেনিক দূষণ ইত্যাদি কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হবে। এই পানি প্রকল্পভুক্ত এলাকাবসীকে সরবরাহ করা হলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৬ হাজার ৮৭২টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইফনিট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পাভুক্ত এলাকাগুলো সেফলি ম্যানেজড পানি সরবরাহের কাভারেজ ২০৩০ সাল নাগাদ ৬০ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল শিকার এদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলো। এর প্রভাবে সমুদ্রের পানি স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড়- জলোচ্ছাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শুধু ভূ-উপরিস্থই নয় বরং ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরেও লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় এমনটিও পরিলক্ষিত হয়েছে যে সেখানে কোনো পানযোগ্য পানির উৎসও আর পাওয়া যায়নি। এমনকি নদী-খাল-বিল-পুকুরের পানিও লবণাক্ততার শিকার হয়, যা শুস্ক মৌসুমে আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এ সব পানির উৎসের পানি পান করা, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা যায় না। মিঠা পানির অভাবে এই এলাকার অধিবাসীদের বাধ্য হয়েই এই লবণাক্ত পানি পান করতে হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ, মহিলাদের গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা, কিডনী রোগ ও চর্মরোগ ইত্যাদিতে আক্রান্ত হন।
দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার মধ্যে ১০টি জেলার সমন্বয়ে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। পানযোগ্য পানিতে লবণাক্ততার গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫০০ পিপিএম, অথচ এদেশের উপকূলীয় কিছু কিছু এলাকার পরিমাণ প্রায় এর দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। উপকূলীয় অনেক এলাকাতে মিঠা পানির উৎস অপ্রতুল তাই উৎস অনেক দূরবর্তী স্থান হতে পানি সংগ্রহ করতে হয়। তাই এ সকল এলাকায় বৃষ্টির পানি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লবণাক্ততা প্রবণ এ সকল এলাকাগুলো বৃষ্টির পানির এই ব্যবহার অনেকাংশেই তাদের সুপেয় পানির অভাব মেটাতে পারবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করার এই প্রযুক্তি অনেক পুরনো। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং লবণাক্ততা প্রবণ বা পানযোগ্য পানির অভাব সংকুলিত পৃথিবীর অনেক দেশেই একটি বহুল জনপ্রিয় পদ্ধতি। যেখানে বৃষ্টির প্রাচুর্যতা রয়েছে, সেখানকার অধিবাসীরা বছরের একটি সময়ের জন্য এই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেন যা পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারেন।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সদ্য সমাপ্ত ‘খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পল্লী এলাকার নিরাপদ পানি সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মোট ৫ হাজার ৯৫০টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়। স্থাপিত রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেমগুলো সচল রয়েছে এবং এর গুণগত মান ভালো। এই ইফনিটগুলোর মধ্যে ২১৫টি ইউনিটের পানির নমুনা বিভিন্ন পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি, সংরক্ষণের বিভিন্ন মেয়াদে গুণগত মান পরীক্ষার জন্য পানি পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার ফলাফলে মোট নমুনার শতকরা ৯৫ ভাগ পানি ব্রাকটেরিয়া দূষণমুক্ত পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উপকূলীয় ১০টি জেলার ৪৪টি উপজেলার ২২২টি ইউনিয়নে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে এলাকাবাসীদের লবণাক্ততা ও আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
যেখানে বাস্তবায়ন হবে প্রকল্পটি: দেশের উপকূলীয় ১০টি জেলার ৪৪টি উপজেলা হচ্ছে, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ সদর, কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী, মুকসুদপুর উপজেলা। খুলনা জেলার কয়রা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও রূপসা উপজেলা। বাগেরহাট জেলার কুচুয়া, চিতলমারী, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল ও শরণখোলা উপজেলা। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, কলারোয়া, কালীগঞ্জ, তালা, দেবহাটা, শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা। বরগুনা জেলার বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলা। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া ও ইন্দুরকানী উপজেলা। ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া, নলছিটি ও রাজাপুর উপজেলা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা। চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড ও সদ্বীপ উপজেলা। কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং টেশনাফ উপজেলায় হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস
উপকূলীয় অঞ্চল বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম