Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রানিং ভাতা বহালের দাবিতে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৩৬

ফাইল ছবি

ঢাকা: রেলওয়ের সংস্থাপন কোড অনুযায়ী রানিং স্টাফরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে বা একশ’ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের সমপরিমান টাকা ভাতা হিসেবে পান। আর এই ভাতাকে বলা হয় মাইলেজ বা রানিং ভাতা। এই সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয় গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে। সেই থেকে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন রেলের স্টাফরা। যা এখন আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আন্দোলনরত স্টাফরা জানিয়েছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মাইলেজ সুবিধা বহাল না করলে তারা লাগাতার কর্মবিরতিতে যাবেন। ওইদিন থেকে রেলের চাকা ঘুরবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, এই অঞ্চলে রেল যাত্রার শুরু থেকে অর্থাৎ দেড়শো বছরের বেশি সময় ধরে রেলের রানিং স্টাফরা মাইলেজ সুবিধা বা রানিং ভাতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু নতুন করে বেতন হিসাবের সফটওয়ারে (আইবাস) ৩০ দিনের বেশি মাইলেজ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ বিষয়ে গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে স্টাফদের এই সুবিধা বন্ধের আদেশ দেওয়া হয়। গত ৩ নভেম্বর অর্থমন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাইলেজ ভাতা মূল বেতনের অংশ হিসেবে গণ্য হবে না। তা পেনশনেও যোগ হবে না। আরও বলা হয়, ভাতার পরিমাণ মাসিক মূল বেতনের বেশি হতে পারবে না। এরপর থেকেই শুরু হয় প্রতিবাদ। ওই প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন স্টাফরা। তাদের বক্তব্য, যে বেতন আমরা পাচ্ছি তাতে সংসার চালানো কোনোভাবে সম্ভব নয়। মাইলেজ সুবিধার কারণে তাদের সংসার ভালোভাবে চলছে।

বিজ্ঞাপন

ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার), গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) রানিং স্টাফ বলা হয়। রেলওয়ে সংস্থাপন কোড অনুযায়ী, এই স্টাফরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে বা একশ’ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের সমপরিমান টাকা যা মাইলেজ ভাতা নামে পরিচিত তা পান। জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে চালক, গার্ড ও টিটিদের দৈনিক কর্মঘণ্টা করা হয়েছে ১২ ঘণ্টা। রানিং স্টাফদের বক্তব্য, দিনে তাদের কর্মঘণ্টা বারো ঘণ্টা হলেও কাজ করতে হয় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা। তারা মূল বেতনের চেয়ে মাইলেজ ভাতা বেশি পান।

জানা যায়, গত বছরের জুনে রানিং স্টাফদের বেতনভাতা ও সরকারি আইবাস প্লাস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইবাসে মাসে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি ট্রেন চালানোর জন্য ইনপুট দেওয়ার সুযোগ নেই। অথচ রানিং স্টাফরা মাসে ছয় সাত হাজার কিলোমিটার ট্রেন চালান। রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানোর পরেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি বলে জানান তারা। ফলে বড় আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, এই অঞ্চলে রেলযাত্রা শুরু থেকে রেল কোডের বিধান অনুযায়ী স্টাফ কর্মচারীরা মাইলেজ সুবিধা পেয়ে আসছে। মূল কর্মঘণ্টার চেয়ে আমরা যে পরিমাণ ডিউটি করি তাতে মাসিক বেতনের সঙ্গে ২০ থেকে ৬০ দিনের মাইলেজ দেওয়া হতো। কিন্তু নতুন যে আইবাস পদ্ধতি করা হয়েছে তাতে ৩০ দিনের বেশি মাইলাজ সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে ট্রেন চালকরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেও প্রাপ্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা গত মাসেও কিছু কর্মসূচি পালন করেছি। রেলমন্ত্রী, সচিব এবং রেলওয়ে মহাপরিচালক ও জিএম বরাবরে দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আমাদের বক্তব্য, আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ১ নম্বর পত্রের ‘খ’ ও ‘গ’ ধারা বাতিল করে রেলওয়ে কোড ও বিধিবিধান মতে আগের মতো দ্রুত পেনশন কেস নিষ্পত্তিসহ অর্জিত মাইলেজ না দেওয়া হলে ৩১ জানুয়ারি থেকে আমরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করব।’

জানা যায়, অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ডিসেম্বরে দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করার কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু রেল মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আর দৈনিক আট ঘণ্টার হিসাব থাকবে না। দাবি না মানলে ৩১ জানুয়ারি থেকে টানা কর্মবিরতি চলবে।’ তিনি বলেন, ‘তারা (কর্মকর্তারা) বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দিলেও তা আর হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার দুজনেই অসুস্থ হয়ে বিশ্রামে রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট এক কর্মর্কতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, আন্দোলনরত স্টাফ কর্মচারীদের দাবির চিঠি পাওয়া গেছে। বিষয়টি রেলওয়ের হলেও সিদ্ধান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সূত্রের ১ নম্বর পত্রের ‘খ’ ও ‘গ’ ধারায় বেসামরিক কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবের ক্ষেত্রে মূল বেতনের সঙ্গে কোনো ভাতা যোগ করে হিসাব করার সুযোগ নেই। যে কারণে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মূল বেতনের সঙ্গে মাইলাজ ভাতা দিতে অর্থ বিভাগ অসম্মতি জানিয়েছে। ফলে রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারীদের দাবি কীভাবে পূরণ হবে এবং তাদের আন্দোলন যদি লাগাতার হয় তাহলে রেলপথের যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

টপ নিউজ ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি রানিং ভাতা রেলওয়ে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর