চট্টগ্রামে ৭ ছিনতাইকারী গ্রেফতার
২৬ জানুয়ারি ২০২২ ২০:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে ট্রাভেল এজেন্সির এক কর্মকর্তার কাছ থেকে লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সাতজন সংঘবদ্ধ একটি ছিনতাইকারী দলের সদস্য, যে দলে অন্তত ১০০ জন আছে। তারা বাসে, ব্যস্ত সড়কে, ফুটপাতে, শহরের নির্জন স্থানে অহেতুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ছিনতাই করে।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে নগরীর নয়াবাজার বিশ্বরোড এবং পলোগ্রাউন্ড এলাকায় পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে কোতোয়ালী থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে একটি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজ, ছোরা এবং ছিনতাই করা ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেফতার সাতজন হলো মো. রকি (২৪), রফিকুল ইসলাম বাপ্পি (২৭), সাইফুল ইসলাম (৩০), তৌহিদুল ইসলাম তপু (২৪), জসিম উদ্দিন (২২), মো. সাহাবুদ্দিন (৩২) এবং তাজুল ইসলাম (৩৪)।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন সারাবাংলাকে জানান, এম এইচ হজ গ্রুপ নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির রিজার্ভেশন অফিসার তানজিদুল ইসলাম গত সোমবার দুপুরে নগরীর জুবিলি রোডে ছিনতাইয়ের শিকার হন। তিন পুলের মাথায় আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক থেকে তিনি এক লাখ টাকা তুলে জুবিলি রোডের অফিসে হেঁটে যাচ্ছিলেন।
পেছন থেকে ৫-৬ জন এসে হঠাৎ তাদের পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা সামলাতে না পেরে তানজিদুল রাস্তায় পড়ে যান। ধাক্কার কারণ জানতে চাইলে তারা গালিগালাজ করে তাকে শারীরিক আক্রমণ শুরু করে। একপর্যায়ে আরও ১-১২ জন ঘটনাস্থলে আসে। তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা কেড়ে নিয়ে চলে যায়।
ওসি নেজাম বলেন, ‘তানজিদুলের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমরা প্রথমে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করে সাতজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, তারা গণপরিবহনে, ব্যস্ত কিংবা নির্জন সড়কে ও ফুটপাতে, জনসমাগম বেশি এমন এলাকায় ধাক্কা দিয়ে কৃত্রিম পরিস্থিতি তৈরি করে একপর্যায়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে।’
‘এছাড়া নির্জন কোনো রাস্তায় বা বিনোদন কেন্দ্রের সামনে কিশোর-কিশোরী কিংবা তরুণ-তরুণী হেঁটে যেতে দেখলে তাদের টার্গেট করে। কিশোর কিংবা তরুণটির সঙ্গে তার বোনের প্রেমের সম্পর্ক আছে এমন দাবি করে তার কলার ধরে ফেলে। এভাবে জটলা বেঁধে গেলে একপর্যায়ে মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।’— বলেন ওসি নেজাম
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোমিনুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেফতার সাতজনের মধ্যে সাহাবুদ্দিন হচ্ছে দলের প্রধান। ছিনতাইকারীরা তাকে মুরব্বী এবং কাজের সময় মিস্ত্রি বলে সম্বোধন করে। সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় ১৫টিসহ অন্তঃত ২৮টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা তাকে গ্রেফতার করেছিলাম। পাঁচমাস আগে জামিনে বেরিয়ে আসে। এরপর আবার তার গ্রুপকে সক্রিয় করে ছিনতাইয়ে নেমেছে। তার গ্রুপে অন্তত ১০০ জন ছিনতাইকারী আছে বলে সে তথ্য দিয়েছে।’
‘এই গ্রুপের মূল আস্তানা হচ্ছে কাজির দেউড়ি এলাকা। শহরের যে কোনোস্থানে ছিনতাই শেষ করে এরা কাজির দেউড়িতে এসে মিলিত হয়। এরা দৈনিক তিন শিফটে ছিনতাই করে। ১৫ জন করে ভাগ হয়ে একেকটি গ্রুপে বের হয়। এক গ্রুপ কাজির দেউড়ি থেকে নিউমার্কেট হয়ে আগ্রাবাদ, আরেক গ্রুপ বড়পোল থেকে অলঙ্কার হয়ে এ কে খান কিংবা বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর হয়ে জিইসি- এভাবে ঘুরে ঘুরে ছিনতাই করে। পুরো গ্রুপ মিলে প্রতিদিন অন্তত ২০-২৫টি ঘটনা ঘটায়। গ্রুপের বাকি সদস্যদের আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’
এস আই মোমিনুল আরও জানান, গ্রেফতার সাতজনের মধ্যে সাইফুল ও তৌহিদুল আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ছিনতাইয়ের দায় স্বীকার করেছে। তাদের সবাইকে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে