ইউনিট সম্মেলন নিয়ে অভিযোগ ‘তদারকি কমিটিকে’ দেওয়ার নির্দেশ
২৬ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলনে অনিয়ম যাচাইবাছাইয়ে গঠিত ‘রিভিউ কমিটি’ দ্বিতীয় দফা বৈঠক করেছেন। কমিটির ডাকে বৈঠকে অংশ নেন নগরীর ২২টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারাও। এছাড়া ১৫ সাংগঠনিক থানায় গঠিত ১৫টি তদারকি কমিটির নেতারাও বৈঠকে ছিলেন।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাত ৮টায় নগরীর দামপাড়ায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে বৈঠক শুরু হয়। মাহতাবের সভাপতিত্বে বৈঠক শেষ হয় রাত সাড়ে ৯টায়। ছয় সদস্যের রিভিউ কমিটির সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ও জহিরুল আলম দোভাষ বৈঠকে ছিলেন।
গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রিভিউ কমিটি প্রথম বৈঠকে বসে ১৫ সাংগঠনিক থানায় ১৫টি প্রাথমিক ‘তদারকি কমিটি’ গঠন করেছিল। সোমবার তদারকি কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জহিরুল আলম দোভাষ।
রিভিউ কমিটির একজন সদস্য জহিরুল আলম দোভাষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম বৈঠকে আমরা শুধুমাত্র তদারকি কমিটিগুলোর আহ্বায়ক হিসেবে নগর কমিটির একজন করে নেতার নাম চূড়ান্ত করেছিলাম। পরশু (সোমবার) আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে কমিটির আরও তিন সদস্যের নাম যুক্ত করি। তদারকি কমিটি এবং যেসব ওয়ার্ডে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আছে তারা আর যেসব ওয়ার্ডে আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়ক আছে তারা, সবাই মিলে আজ (বুধবার) বৈঠক করেছি।’
বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডের নেতাদের সামনে তদারকি কমিটির সদস্যদের নাম পড়ে শোনানো হয়েছে। ইউনিট সম্মেলন, সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি কিংবা অসঙ্গতি থাকলে সেগুলো তদারকি কমিটির কাছে লিখিতভাবে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে আমরা প্রথমে ২২টি ওয়ার্ডের নেতাদের সঙ্গে বসেছিলাম। বাকি ২১ ওয়ার্ডের নেতাদের নিয়ে কাল (বৃহস্পতিবার) আমার বাসায় বৈঠক হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে নগর আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে ইউনিট আছে। ইতোমধ্যে ১২০টিরও বেশি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে। তবে কয়েকটি ইউনিটে পাল্টাপাল্টি সম্মেলন হয়েছে। আবার কয়েকটি গোলযোগের কারণে স্থগিত করতে হয়েছে।
ইউনিটের পাশাপাশি গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ইউনিট সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্র থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তৃণমূলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে পরস্পর বিরোধী দুটি ধারার বিরোধ আরও জোরালো হয়। দুটি ধারার একটির নেতৃত্বে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন আছেন। আরেকটি ধারা প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিউদ্দিনপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাদের সঙ্গে আছেন।
ইউনিট সম্মেলনের শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, মাহতাব-নাছিরের একক কর্তৃত্ব ও ইচ্ছায় তৃণমূলে সম্মেলন হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিটে মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কৌশলে সদস্য করা হয়নি। তাদের বাদ দিয়েই সম্মেলন করে এক নেতার অনুসারীদের মাধ্যমে কমিটি করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনের আগে সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি তথ্য বিবরণী ফরম সরবরাহ করা হয়। সেটি নিয়েও আপত্তি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত ২২ ডিসেম্বর মাহতাব-নাছিরের বিরোধী বলয়ের চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ্য নেতারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়ে ইউনিট সম্মেলন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেন। এরপরই কেন্দ্রীয় নেতারা ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অভিযোগ জানানো নেতারা চট্টগ্রামে কয়েক দফা বৈঠক করে তাদের করণীয় নির্ধারণ করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা গত ১৬ জানুয়ারি জ্যেষ্ঠ্য নেতাদের ঢাকায় ডেকে বৈঠক করেন।
বৈঠকে এরইমধ্যে সম্পন্ন হওয়া ইউনিট সম্মেলন এবং দলের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো পর্যালোচনার জন্য ছয় সদস্যের একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগ যাচাইবাছাই করে কেন্দ্রের কাছে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়।
এছাড়া রিভিউ কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক থানার জন্য নগর কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে একটি করে টিম গঠনের জন্য বলা হয়, যারা থানা এবং ওয়ার্ডে সম্মেলনের সম্ভাব্যতা ও বিভিন্ন অভিযোগ যাচাইবাছাই করে রিভিউ কমিটির কাছে প্রতিবেদন দেবে।
সারাবাংলা/আরডি/একে