৫০ শতাংশই জানেন না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে
২৬ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৫১
ঢাকা: দেশের গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও তাদের অধিকাংশই বিষয়টি সম্পর্কে জানেনই না বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিয়া নাহিদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে যদি খুঁজে দেখা হয়— ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জনই জানেন না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। আমাদের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সবার মধ্যেই এ বিষয়ে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। স্ক্রিনিং কার্যক্রমের প্রতি জোর দিলে প্রাথমিকভাবে অনেকেই নিজের শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর একবার করে অন্তত স্ক্রিনিং করতে হবে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় অসংক্রামক রোগ বিষয়ক প্রথম জাতীয় সম্মেলনের (১ম জাতীয় এনসিডিস কনফারেন্স-২০২২ বাংলাদেশ) প্রথম দিনে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, মানুষ ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গিয়ে সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস লক্ষণ থাকার কথা শুনতে পান। সেখানে পরীক্ষা করে দেখেন, তখন থেকেই ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে যান না। এ কারণে দেশে অসংক্রামক ব্যধি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সবার মধ্যেই জ্ঞানের অভাব রয়েছে। সবাই মনে করে অসুখটা ধরা পড়ার পরে অসুখটা হয়েছে। কিন্তু অসুখটা ধরা পড়ছে শেষ সময়ে। এরপর থেকে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে হবে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওষুধ খেতে হবে। অসুখটা হওয়ার আগেই স্ক্রিনিং করতে পারলে এই সমস্যা হবে না। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর একবার করে অন্তত স্ক্রিনিং করতে হবে। স্ক্রিনিংয়ের মধ্যে শরীরের ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারলে ভালো।
শরীরের মেদ, লবণ ও চিনি বেশি পরিমাণে খাওয়া, বসে বসে কাজ করা, মানসিক চাপে ভোগা, খেলাধুলা না করা, প্রতিদিন নিয়মিত ৩০ মিনিটের কম হাঁটাচলা করা ব্যক্তিদের প্রতিবছর একবার করে স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেন ড. আলিয়া নাহিদ।
তিনি বলেন, এসব অভ্যাস যাদের মধ্যে আছে, তারা অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। অসংক্রামক ব্যধির মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া, হার্টের নানা রকম অসুখ, লিভারের সমস্যা এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিতেও থাকেন তারা।
এই গবেষক আরও বলেন, আমরা গবেষণায় দেখেছি— সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ না করলে চিকিৎসকের কাছে যায় না। এর কারণেই অসংক্রামক ব্যধি মানুষের ওপর ভর করছে। সাধারণ মানুষের উচিত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। যেমন— লবণ ও চিনি বেশি খাওয়া যাবে না, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার ও তামাক পণ্য পরিহার করতে হবে। এর বিপরীতে প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আইসিডিডিআর,বির ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেসের প্রধান ড. আলিয়া বলেন, আমাদের প্রত্যেকের চারপাশে যারা আছেন তারা সুস্থ আছেন নাকি কোনো অসুস্থতায় ভুগছেন— সেটি জানার জন্য চিকিৎসকের কাছে পাঠানো বা সঠিক পরামর্শ দেওয়া আপনার কর্তব্য। যেমন— একটি প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি ইচ্ছা করেন, তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারেন। পাশাপাশি স্ক্রিনিং কার্যক্রমের প্রতি জোর দিলে প্রাথমিকভাবে অনেকেই নিজের শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন।
এদিন সকাল ৯টায় প্রথম জাতীয় এনসিডিস কনফারেন্স-২০২২ বাংলাদেশের উদ্বোধন হয়। তিনটি সেশনে ভাগ করে এই কনফারেন্সে আলোচকরা বক্তব্য রাখেন।
সকালের উদ্বোধনী সেশনে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সেক্রেটারি ডা. সারওয়ার আলী। এই সেশনে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন কবির, পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজিওনাল এনসিডি অ্যালায়েন্সের চেয়ারপারসন ডা. মনিকা আরোরা, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) অধ্যাপক আখতার হোসাইন।
দ্বিতীয় বিজ্ঞান সেশনে বক্তব্য রাখেন ডা. জামান, ডা. শামসুল আরেফিন, ভারতের ডা আরুন জোস, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রুবানা রাকিব, অরগানাইজিং কমিটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. আলিয়া নাহিদ, ডা. আফরিন ইকবাল, ডা. আনোয়ার হোসেন।
দিনের শেষ ভাগে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সন্ধ্যার সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি। সেইসঙ্গে সম্মেলন উপলক্ষে ভিডিওবার্তা পাঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপচিালক টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসিস।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
১ম জাতীয় এনসিডিসি সম্মেলন উচ্চ রক্তচাপ এনসিডিসি সম্মেলন ড. আলিয়া নাহিদ