Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবৈধ চারকোল কারখানায় দূষিত পরিবেশ, রোগাক্রান্ত হচ্ছে মানুষ

মো. আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৪৩

অবৈধ চারকোল কারখানা, ছবি: সারাবাংলা

রাজবাড়ী: জেলার সদর উপজেলায় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না নিয়ে গড়ে তোলা অবৈধ দু’টি চারকোল কারখানার (পাটখড়ির ছাই থেকে কার্বন তৈরির কারখানা) ছাই ও কালো ধোঁয়ায় মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আর এ পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর। শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। একই কারণে কমছে ফসলি জমির উৎপাদনও।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের দর্পনারায়ণপুর গ্রামে দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে এবং খানখানাপুর ইউনিয়নের চর খানখানাপুর গ্রামে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে পৃথক দু’টি চারকোল কারখানা। এসব কারখানায় পাটখড়ির ছাই থেকে তৈরি করা কার্বন চীনে রফতানি করা হয়। যা চীনে মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ, কার্বন পেপার, ফটোকপির কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশ ও প্রসাধন তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবাসিক এলাকায় শিল্প ও কল-কারখানা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও চারকোল কারখানার মালিকেরা বছরের পর বছর কারখানা পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনে আনা হয় পাটখড়ি। এরপর সেগুলো বিশেষ চুল্লিতে লোড করে আগুন জ্বালানো হয়। ১০-১২ ঘণ্টা জ্বালানোর পর চুল্লির মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে কোনোভাবে অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে চার দিন রাখার পর সেখান থেকে বের করে ক্র্যাশিং করে কার্বন প্যাক করা হয়। চুল্লি জ্বালানোর সময় কারখানা থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হয়। এই ধোঁয়াতেই মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত হয়।

কৃষি জমির পাশেই গড়ে উঠেছে চারকোল কারখানা, ছবি: সারাবাংলা

কৃষি জমির পাশেই গড়ে উঠেছে চারকোল কারখানা, ছবি: সারাবাংলা

দর্পনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মজিবর শেখ জানান, কার্বন তৈরির কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আশপাশের আকাশ কালো হয়ে যায়। ধোঁয়ার কারণে রাতে ঘরে থাকা যায় না। ঘরে থাকলেও চোখ জ্বলে। দূষিত ধোঁয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

একই গ্রামের মো. ইমরান হোসেন জানান, ধোঁয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। এসব পদার্থ বাতাসের সঙ্গে মিশে গাছপালায় লাগে। এতে এলাকার গাছপালায় কোনো ফল হয় না। আমের মৌসুমেও গাছে মুকুলের দেখা পাওয়া যায় না। রাতে ঘরে শুয়ে থাকলে সকালে কাশির সঙ্গে ছাই বের হয়।

মো. আলম শেখ জানান, এ কারখানার কারণে আশপাশের এলাকার ফসলি জমিরও উৎপাদন কমে গেছে। কৃষকরা জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও ফলন বাড়তে পারছেন না। তাই দ্রুত এই কারখানাটি এখান থেকে অপসারণ করার দাবি জানাই।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আব্দুর রহমান জানান, বেশি পরিমাণ কার্বন নির্গত হলে বাতাসের সঙ্গে কার্বন অনুগুলো মিশে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগের আশঙ্কা থাকে।

পাটখড়ি জমা করে রাখা হয়েছে পোড়ানোর জন্য, ছবি: সারাবাংলা

পাটখড়ি জমা করে রাখা হয়েছে পোড়ানোর জন্য, ছবি: সারাবাংলা

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে দর্পনারায়ণপুর গ্রামের চারকোল কারখানায় গেলে কারখানার ম্যানেজার মো. নাইম কোনো কথা বলতে রাজী হননি। তিনি ঢাকায় অবস্থানরত মালিকের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

মালিক আতিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানা পরিবেশবান্ধব। আমাদের পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও রয়েছে। তবে সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দ্রুত আমরা মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করব।’

অপরদিকে, চর খানখানাপুর গ্রামের চারকোল কারখানায় গেলে সেখানে কর্মরত কেউ গেট খোলেননি। মালিক ইব্রাহীম সরদারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) এ এইচ এম রাসেদ সারাবাংলাকে জানান, রাজবাড়ীর কোনো চারকোল কারখানারই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব চারকোল কারখানার বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান চালানো হবে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মার্জিয়া সুলতানা জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। যে কারণে চারকোল কারখানার বিষয়টি তার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

সারাবাংলা/এনএস

চারকোল কারখানা পরিবেশ দূষণ রাজবাড়ী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর