দক্ষিণ সিটির বর্জ্য অপসারণে কেনা হচ্ছে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ১১:৩৩
ঢাকা: রাজধানীর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ‘ডিএসসিসি’র অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, সড়ক মেরামতে ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ম্যাকানাইজড পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসনকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৩ কোটি ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২৯৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা এবং ডিএসসিসি’র নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৩ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক যানবাহন-যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে ডিএসসিসি’র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আধুনিক পার্কিং গ্যারেজ নির্মাণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, অবৈধ দখল, উচ্ছেদ কার্যক্রম আগের ৪০ শতাংশের স্থলে ৭০ শতাংশে উন্নীত করা, স্তুপ করা মাটি ও নির্মাণ আবর্জনা অপসারণ আগের ৫০ শতাংশের স্থলে ৮০ শতাংশে উন্নীত করা। সড়ক ও সড়ক বাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, সৌন্দর্যবর্ধন ইত্যাদি সেবা দেওয়ার কাজ আগের ৪০ শতাংশের স্থলে ৭০ শতাংশে উন্নীত করা এবং ৫০০টি গাড়ি ও যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আধুনিক পার্কিং গ্যারেজ নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (্একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি রাজধানীতে রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক বাতি স্থাপন, শহর উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য সেবা ও সেনিটেশনসহ নানা পরিসেবা দিয়ে থাকে। মেগাসিটি ঢাকায় জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেবাগুলো বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না। ২০০৪ সালে ঢাকা শহরের উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ৩২০০ টন। ২০১০ সালে উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৯০৯ টন এবং ২০১৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ৬২৪ টনে উন্নীত হয়েছে। গৃহস্থলীর বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ জনপ্রতি শূন্য দশমিক ৩৪ কেজি প্রতিদিন। রাস্তার বর্জ্য কমার্সিয়াল বর্জ্য সব মিলিয়ে দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ জনপ্রতি শূন্য দশমিক ৫৬ কেজি প্রতিদিন। বর্তমানে প্রতিদিন জনপ্রতি উৎপাদিত বর্জ্যর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে শূন্য দশমিক ৭৮ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। সে অনুযায়ী শুধুমাত্র ডিএসসিসি’র বর্তমানে উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ প্রায় ৪৫০০ টন। সংস্থাটির অন্যতম প্রধান কাজ হলো বর্জ্য সংগ্রহ এবং ব্যবস্থাপনা। বর্তমানে আরও ১৮টি ওয়ার্ড নতুন করে সংযুক্ত হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেবাসহ অন্যান্য সেবা সরবরাহের জন্য বর্জ্যবাহী গাড়ি, বৈদ্যুতিক সেবা ও সরঞ্জামাদি ইত্যাদি সরবরাহ করা প্রয়োজন। তাই প্রস্তাবিত প্রকল্পে বর্জ্যবাহী গাড়ি, বৈদ্যুতিক গাড়িসহ প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি প্রস্তাবিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, ঈদ-উল আজহা, ঈদ-উল ফিতর, ১লা বৈশাখ, দুর্গাপূজাসহ ২৬ শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর, ২ শে ফেব্রুয়ারি, ১৫ আগস্ট, প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রোগ্রাম, বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বৈদেশিক বিভিন্ন ভিআইপি ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রোগ্রামে মোবাইল টয়লেট ভ্যান পাঠায় ডিএসসিসি। কিন্তু সংস্থাটির যে মোবাইল টয়লেট ভ্যান রয়েছে তা অনেক পুরাতন এবং চাহিদার তুলনায় খুবই কম হওয়ায় বিভিন্ন ভিআইপি গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে পাঠানো সম্ভব হয় না। তাই প্রস্তাবিত প্রকল্পে মোবাইল টয়লেট ভ্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ করতে ডিএসসিসি’র ট্রাফিক ডিভিশন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া আছে। তাই ট্রাফিক জ্যাম নিরসনসহ সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মেরামত কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যান-যন্ত্রপাতি প্রস্তাবিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ২০টি হাইড্রোলিক ল্যাডার, ৫টি এক্সাভেটর চেইন মাউন্টেড সরবরাহ, একটি এক্সাভেটর চেইন মাউন্টেড এবং ৫টি চেইন ডোজার কেনা হবে। এছাড়া ৫টি বেকহো লোডার, ১০টি দুই চাকার রোড রোলার, ৫টি তিন চাকার রোড রোলার, ৫টি মোবাইল টয়লেট (ভিআইপি), ৫টি মোবাইল টয়লেট (সাধারণ), ৩টি বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন ফিসহ নতুন মডেলের জিপ সরবরাহ, ৫টি বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন ফিসহ নতুন মডেলের ডাবল কেবিন পিকআপ সরবরাহ, ৪টি পুলিশবাহী প্রটেকশন ট্রাক, ৫টি বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন ফিসহ নতুন মডেলের ম্যাজিস্ট্রেটবাহী মাইক্রোবাস, ৫টি পে লোডার, ৩টি টায়ার ডোজার, একটি লো-বেড ট্রেইলর, দুইটি হুইল মাউন্টেড স্কেভেটর এবং ১০টি পানির গাড়ি সরবরাহ করা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে ডিএসসিসি’র বর্জ্য অপসারণ, রাস্তা মেরামতসহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পারে এবং যান-যন্ত্রপাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আধুনিক পার্কিং গ্যারেজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। ফলে নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস