‘কবিতার মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসে প্রতিবাদের ভাষা’
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:৩৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি কবিতার শক্তি যে কত বেশি সেটা আমরা জানি। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা যাচ্ছে না তখন তো কবিতার মধ্য দিয়েই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে। এবং মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসবের উদ্বোধনী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক ২০২০-২২ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে এই আবৃত্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালি। আমাদের একটা সংস্কৃতি আছে। আমাদের চিন্তায়, চেতনায়, ভাষা, সাহিত্যে সংস্কৃতি সবসময় ঐতিহাসিকভাবে জড়িত। পাকিস্তান আমলে সর্বপ্রথম আঘাত এসেছিল আমাদের সংস্কৃতির উপর, ভাষার উপর। সেই ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেওয়ার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইন বিভাগের ছাত্রা থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। এবং তৎকালীন ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে আন্দোলন বেগবান করার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।’
তিনি বলেন, ‘সেই থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- সে এক অমর কবিতা। এই কবিতা কিন্তু অর্জন হয়েছে সেই ভাষা আন্দোলন থেকে। তবে এর মধ্যে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে আছে, আমি তখন স্কুলের ছাত্রী। তখন রবীন্দ্র সাহিত্য বাতিল করা হয়, রবীন্দ্র সংগীত বন্ধ করা হয়। বাংলাকে ভাষাকে লেখা হতো কখনো আরবি শব্দে, কখনো ল্যাটিন শব্দে। এরকম নানা আঘাত আমাদের উপর বারবার এসেছে। কিন্তু বাঙালি থেমে থাকেনি, এর প্রতিবাদ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এদেশের আন্দোলনে সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে কবি-সাহিত্যিক ও নাটকের দলের। আন্দোলনের সময় অনেকেই বই ছাপিয়েছেন, নাটক করেছেন, কবিতা ছাপিয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন; যাতে গ্রেফতারও হয়েছেন। কিন্তু কেউ থেমে থাকেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলাম তখনও পথনাটক, কবিতা, বিভিন্ন আবৃত্তির মধ্য দিয়েই প্রতিবাদ এসেছে এবং সেখানে অনেক বাধা বিপত্তি এসেছিল। কবিতার মধ্য দিয়ে অনেক না বলা কথা হয়, অনেক সংগ্রামের পথ চলা হয়। আমার মনে হয়, একটি কবিতার মধ্য দিয়ে অনেক বেশি মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়। কবিতা, গান, নাটক বা সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ের কথা উঠে আসে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে আগে কবিয়ালদের লড়াই হতো। আসলে বাঙালিরা সহজাতভাবেই কবি। এটাই হলো বাস্তবতা। কাজেই আজ আমি আনন্দিত। আজ আমাদের এই কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও দুর্ভাগ্য আমি যেতে পারলাম না। এটাই আমার দুঃখ। করোনাভাইরাসের কারণে আমার যাতায়াত খুব সীমিত আকারে চলছে।’
বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমদু, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
কবিতা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ শেখ হাসিনা