ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে ‘গেস্টরুম’ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, অসুস্থ থাকার পরও তাকে ডেকে নিয়ে গেস্টরুম নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
বুধবার (২৬জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আকতারুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী আকতারুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত ১০টায় তাদের গেস্টরুম ছিল। অন্যরা গেস্টরুমে গেলেও আমি অসুস্থ থাকায় যেতে পারিনি। পরে রাজু, কাজল, ইয়ামিম, সাইফুল, রোহান ও শুভ আমাকে ডেকে গেস্টরুমে না যাওয়ার কারণ জানতে চায়। তখন আমি অসুস্থতার কথা জানিই। প্রত্যুত্তরে অভিযুক্তরা বলে, কিসের অসুস্থ তুই? তোকে বিকেলেই কলা ভবনের সামনে দেখলাম!’
আকতার জানান, কথা বলার সময় তার হুডির টুপি মাথায় থাকলে, তাকে গালি দিয়ে বলে ‘তুই গেস্টরুমের কালচার জানস না! তুই জলন্ত লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকবি!’ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তার অন্য ব্যাচমেটদের সাহায্যে গণরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আকতার অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢামেকের ডাক্তার তার ইসিজি, কোভিড টেস্ট ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হলে পাঠিয়ে দেন।
এর পর হল প্রশাসনকে দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে আকতার বলেন, ‘এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্তরা হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোহান, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিন ইসলাম এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের ওমর ফারুক শুভ। তারা সকলেই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।’
হল সূত্র জানায়, অভিযুক্ত সবাই ছাত্রলীগের হল শাখার শীর্ষ পদপ্রত্যাশী আবু ইউনুস ও রবিউল ইসলাম রানার অনুসারী। আর এরা দুজন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
এ প্রসঙ্গে পদপ্রত্যাশী আবু ইউনুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারা যে গেস্টরুম নিচ্ছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। হল প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে যেন দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।’
অন্য এক পদপ্রত্যাশী বরিউল ইসলাম রানা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা ছিল না। প্রশাসনকে বলব, তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়।’
পরে রাত দুইটার দিকে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছিরকে সাংবাদিকরা ফোন করলে তখনই তিনি হলে আসেন। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিচারপ্রাপ্তির আশ্বাস দেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক আব্দুল বাছির বলেন, ‘এই ঘটনা খুব দুঃখজনক। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ‘মধ্যরাতে আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। এমনটা প্রত্যাশিত নয়।’ এ সময় হল পর্যায়ে রাজনীতিতে সক্রিয় সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তদন্ত কমিটি গঠন
এদিকে ‘গেস্টরুম’ নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। হাউজ টিউটর জাহিদুল ইসলাম সানাকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।