মোংলায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৪৬
ঢাকা: জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে ডেনমার্কের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ব্র্যাক। প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছাকাছি নিরাপদ পানীয় জলের একটি উৎস তৈরি করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এই স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
ডেনমার্ক সরকারের উন্নয়ন কৌশল ‘দ্য ওয়ার্ল্ড উই শেয়ার’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পটি মোংলায় ক্ষুদ্র স্তরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগকে ছড়িয়ে দেবে। এটি জনগোষ্ঠীকে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন পদ্ধতি অনুসরণ করে, সরকার এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের জীবনযাপন সহজতর করবে।
‘এনহ্যান্সিং সেফ ড্রিংকিং ওয়াটার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স থ্রু রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
মোংলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটির মোট বাজেট ২ কোটি ৯০ লাখ ডেনিশ ক্রোন দেবে বাংলাদেশের ডেনিশ দূতাবাস। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
লবণাক্ততা বিস্তারের ফলে মোংলা বাংলাদেশের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এর ৬০ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দা নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা পান না। পরিবারের নারীদের কয়েক কিলোমিটার হেঁটে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এতে তাদের গার্হস্থ্য কাজের অতিরিক্ত চাপ এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং উপার্জনের দিক দিয়ে নাজুক অবস্থায় আছে তারা। বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী নারী।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে মোংলা উপজেলার ৬৭ হাজার ৩০০ মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা পাবে। বাড়ি থেকে দূরের উৎস থেকে খাবার পানি আনার প্রয়োজন হবে না। এর ফলে এলাকার নারী ও মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ পাবে। অবসরে তারা আয়বর্ধক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ছাড়াও উপজেলার টার্গেট এলাকা জুড়ে ৫৪টি ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হবে। যারা এই উৎসগুলোর সমন্বয়, পরিকল্পনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের নেতৃত্ব দেবে। নিরাপদ পানীয় জলের জন্য এর মত আরও কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি খাতের সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব তৈরি করা হবে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসন বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। কপ ২৬-এর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের মধ্যে ডেনমার্ক বিশ্বব্যাপী অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়নে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ শত মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করবে। সেই জলবায়ু প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন করতে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য জলবায়ু-অভিযোজিত ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘পানীয় জল আনতে কারও দুই কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া উচিত নয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নিরাপদ পানীয় জল পাওয়ার এই মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ব্র্যাক অবিরাম প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডেনমার্ক দূতাবাস এগিয়ে এসেছে। এ জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই।’
এই অংশীদারিত্বে একত্রে শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রতিটি বাংলাদেশীর জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের একটি সামগ্রিক এবং টেকসই মডেল তৈরির লক্ষ্যে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/আরএফ/