Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অল্প জমিতে বেশি লাভ, মিশ্র বাগানে সফল চাষি কাদির

শ্যামল মিত্র, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:১৮

নরসিংদী: মিশ্র ফলের বাগানে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কাদির ভূঁইয়া রোমান। একই জমিতে বিভিন্ন জাতের ফলের পাশাপাশি করছেন নানা প্রকার সবজির আবাদ। এতে অল্প জমিতেই মিলছে বেশি লাভ।

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের গাঁংকুলকান্দী গ্রামের ক্যাবল ব্যবসায়ী রোমান। করোনার কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হলে বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে দেড় বছর আগে ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে একই জমিতে শুরু করেন, থাই পেয়ারা, মালটা, ড্রাগন, বিভিন্ন জাতের কুলসহ নানা ধরনের সবজির চাষ। এবছর নতুন করে আরো ১০ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তুলেছেন বাগান। এখন তার এ বাগানে কাজ করে অনেকেই চালাচ্ছেন সংসার।

আশেপাশের লোকজন প্রথমে তার এ কাজে ক্ষতি হবে ভেবে ভয় পেলেও তার সাফল্যে এখন সবাই খুশি। বেকার যুবকরা প্রতিদিন ছুটে আসছে তার কাছে। অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ নিয়ে অনেকেই শুরু করেছেন বাগান আবার কেউ কেউ করার করছেন পরিকল্পনা।

রোমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি একজন ক্যাবল ব্যবসায়ী। এই ব্যবসা এখন বেশি একটা ভালো না। করোনার কারণেও আমি এই ব্যবসাতে একটু ধরা খাইছি। পরে বিকল্প উপার্জনের চিন্তায় এলাকার যে কৃষি অফিসার আছে ওনার পরামর্শে দেড় বছর আগে কিছু জমি লিজ নিয়ে পেয়ারা বাগান করি। পেয়ারার পাশাপাশি মাল্টাও লাগাইছি। পেয়ারার যে জাতটা লাগাইছি থাই-৭ এইডা ৪-৫ বছর ফলন দিয়ে আর থাকে না। এর ফলে পেয়ারার ফলন শেষ হইতে না হইতেই আমার মালটার ফলন শুরু হইবো।’

‘এছাড়া দুই গাছের মাঝে যে ফাঁকা জায়গা থাকে তার মাঝে আমি বিভিন্ন জাতের সবজি লাগাই দিছি। এই সবজি দিয়াই আমার বাগানের সব খরচ ওঠে গেছে। অন্য একটা জমিতে আমি ড্রাগন গাছ লাগাইছি। পাশাপাশি রেড আপেল, বলসুন্দরী বরই লাগাইছি, কাটিমন আম লাগাইছি। রেড আপেল বরই বাগান আমি এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। বল সুন্দরী এখনও ফল ধরেনি। আর পেয়ার এখন মোটামুটি বাজার ভালোই। ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি করছি’, বলেন এই সফল চাষি।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক দিন আমার এই বাগান দেখতো অনেকে আসে। নানা কথা জিগায়, কেমনে কি করছি। তারাও নাকি বাগান করবো। আমার দেখাদেখি আমার এক চাচা, এক চাচাতো ভাই এই মিশ্র চাষের বাগান করছে। দুই বিঘা জমি দিয়া শুরু করছি। এ বছর আমার জমির পরিমান ১০ বিঘা। আরও জমি লিজ নিতে খুঁজতেছি। এখন প্রতিদিন আমার বাগানে ৪-৫ জন লোক কাজ করে।’

রোমানের চাচাতো ভাই লিমন ভূঁইয়া বলেন, ‘রোমান ভাইকে দেইখা আমি সিডলিজ আর বল সুন্দরী জাতের কুলের বাগান করছি। প্রথম বছরের তুলনায় ভালো কুল ধরছে গাছে। পেয়ারার বাগান করার জন্য কিছু জমি খুঁজছি।’

বাগানের এক পরিচর্যাকারী বলেন, ‘আমরা ৪-৫ জন মানুষ রোমান ভাইয়ের বাগানে কাম করি। মাস শেষে আমরা প্রত্যেকে আট হাজার টাকা কইরা নেই, এতে আমাদের সংসার চলে। মলিক কইছে এক বছর পরে বেতন বাড়াই দিবো।’

মনোহরদী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুখ হোসেন বলেন, ‘রোমান আমার কছে এসেছিল পরামর্শ নেওয়ার জন্য। আমি তাকে মিশ্র চাষের ব্যাপারে বলি। সে মিশ্র চাষে আগ্রহ প্রকাশ করলে আমরা তাকে সবপ্রকার সহযোগিতা করি এবং প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করা রোমানের আজ ১০ বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের বাগান। এর মধ্যে আছে থাই-৭ জাতের পেয়ারা, মালটা, ড্রগন ফল, বিভিন্ন জাতের কুলসহ নানা জাতের আম।’

‘এছাড়া একই জমিতে একইসময় করা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার সবজির আবাদ। যা থেকে উঠে আসছে খরচের সিংহ ভাগ। থাই-৭ জাতটি একটি ১২ মাসি পেয়ারা। এটি ৪-৫ বছর ফলন দেওয়ার পর নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ জাতটি মিশ্র চাষে উপযোগী। পেয়ারার পাশাপাশি মালটার গাছ লাগানো যায়। ফলে পেয়ারার ফলন শেষ হতে না হতেই কৃষক মালটার ফলন পেতে শুরু করে’ বলেও জানান তিনি।

মনোহরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আয়েশা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিশ্র বাগান হচ্ছে সামান্য জমিতে অল্প সময়ে স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ার একটি সময় উপযোগী প্রক্রিয়া। মিশ্র বাগানে উদ্বুদ্ধকরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সকল ধরণের টেকনিকেল সাপোর্ট বা কারিগরি পরামর্শ আমরা কৃষকদের দিয়ে থাকি। বিভিন্ন সময় আমাদের বছরব্যাপী ফল বাগান এবং পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওয়তায় বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ যা জেলায় বাস্তবায়ন হয় তা দিয়ে থাকি। আবার লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওয়তায় বিভিন্ন ধরনের মালটা এবং লেবু জাতীয় ফসলের উপর প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনির আয়োজন করা হয়ে থাকে। কৃষি ঋণটা মুলত কৃষি ব্যাংক থেকে দিয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে মূলত তেল এবং মসলা জাতীয় ফসলের উপর ঋণটা দেওয়া হয়। তবে যদি কোনো কৃষক চায় তবে আমরা ঋণের ব্যপারেও তাদের সহযোগিতা করে থাকি।’

অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছে মিশ্র বাগানে। এ বছর মনোহরদীর লেবুতলা ইউনিয়নে মোট ৩৫ বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের বাগান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এমও

ফল বাগান বেশি লাভ মনোহরদী উপজেলা মিশ্র বাগান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর