‘নিষেধাজ্ঞার যে তকমা সরকার অর্জন করেছে তা জাতির জন্য লজ্জাজনক’
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৩০
ঢাকা: গুম, হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে সরকার ‘নিষেধাজ্ঞার তকমা’ অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
তিনি বলেন, সরকারের ‘অর্জন’ এই তকমা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এই নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যতে যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে সরকার বিরত না থাকে এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যদি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে আরও বহু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ‘গুম, হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন: সংকটে রাষ্ট্র’ শীর্ষক এক র্ভাচুয়াল আলোচনায় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জেএসডি আয়োজিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন গণফোরাম নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নির্বাচন পর্যবেক্ষক অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া ও শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। আলোচনা সভায় জেএসডির কেন্দ্রীয় নেতারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
সভায় গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিকারে আ স ম আবদুর রব সাত দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। প্রস্তবনায় বলা হয়—
১) রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে;
২) সংঘটিত গুম-খুনের শিকার ও ভুক্তভোগী পরিবারদের পাশে সহানুভূতির সঙ্গে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে;
৩) জাতিসংঘ, দাতা দেশ ও বেসরকারি সংস্থাগুলো বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে উত্থাপিত যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেগুলো আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে;
৪) গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের পাঠানো অভিযোগগুলোর জবাব এবং তাদের বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য দ্রুত অনুমতি দিতে হবে;
৫) সব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি কাজে সম্পৃক্ত করা নিষিদ্ধ করতে হবে;
৬) বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন বিচারব্যবস্থা পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে; এবং
৭) বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ, সর্বোপরি গণতন্ত্র হত্যার দায়ে সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
আলোচনা সভায় মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, ক্ষমতাকে কেউ চিরস্থায়ী করতে পারে না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান তৈরি করতে হবে।
সাইফুল হক বলেন, কোনো সভ্য সমাজে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না। এসব বিষয়ে সরকারকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে যে অস্বীকারের সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে নিষেধাজ্ঞা ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনবে।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর