১৫ থানায় দোভাষ-সুজন-রেজাউলসহ ১৫ ‘তদারক প্রধান’
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলনে অনিয়ম যাচাইবাছাইয়ে গঠিত ‘রিভিউ কমিটির’ তৃতীয় দফা বৈঠক হয়েছে। কমিটির ডাকে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সাংগঠনিক ২১টি ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতারা। এ ছাড়া ১৫টি সাংগঠনিক থানার জন্য গঠিত তদারকি কমিটির আহ্বায়করাও ছিলেন।
রিভিউ কমিটির সদস্য নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষের নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের বাসভবনে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বৈঠক শুরু হয়। টানা দু’ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দোভাষ। এসময় রিভিউ কমিটির বাকি পাঁচ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ছিলেন।
১৫টি তদারকি কমিটিতে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকা ১৫ জন নেতা আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন।
এর মধ্যে কোতোয়ালী থানায় জহিরুল আলম দোভাষ, বন্দর থানায় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ, পাহাড়তলী থানায় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, ডবলমুরিং থানায় সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, হালিশহর থানায় সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, খুলশী থানায় যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম, পাাঁচলাইশ থানায় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, বায়েজিদ বোস্তামি থানায় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, সদরঘাট থানায় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, চকবাজার থানায় সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, ইপিজেড থানায় অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম, আকবর শাহ্ থানায় সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, পতেঙ্গা থানায় সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী, চান্দগাঁও থানায় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বাকলিয়া থানায় সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল দায়িত্ব পেয়েছেন।
গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রিভিউ কমিটি প্রথম বৈঠকে বসে ১৫ সাংগঠনিক থানায় ১৫টি ‘তদারকি কমিটির’ খসড়া করে। এতে ১৫ জন নেতাকে আহ্বায়কের দায়িত্ব বণ্টনের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া প্রতিটি কমিটিতে আহ্বায়কের সঙ্গে তিনজন সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্য থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
বুধবার রিভিউ কমিটির দ্বিতীয় দফা বৈঠকে ১৫ জন আহ্বায়ক চূড়ান্ত করা হয়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কমিটির বাকি সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনার পাশাপাশি তালিকা প্রণয়ন হয়েছে। তবে এটা আরও যাচাইবাছাই করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
এদিকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তদারকি কমিটির আহ্বায়ক এবং যেসব ওয়ার্ডে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আছেন তারা এবং যেসব ওয়ার্ডে আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়ক আছেন তারা যোগ দেন।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গতকাল (বুধবার) ২২টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের নেতাদের নিয়ে বসেছিলাম। আজ বাকি ২১টি ওয়ার্ডের সঙ্গে বসেছি। সবাইকে বলা হয়েছে, ইউনিট সম্মেলন, সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি কিংবা অসঙ্গতি থাকলে সেগুলো তদারকি কমিটির কাছে লিখিতভাবে জমা দেওয়ার জন্য। এছাড়া তদারকি কমিটির ১৫ জন আহ্বায়ক আমরা চূড়ান্ত করেছি। কমিটির সদস্যদের নাম যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে কমিটি চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে নগর আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে ইউনিট আছে। ইতোমধ্যে ১২০টিরও বেশি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে। তবে কয়েকটি ইউনিটে পাল্টাপাল্টি সম্মেলন হয়েছে। আবার কয়েকটি গোলযোগের কারণে স্থগিত করতে হয়েছে।
ইউনিটের পাশাপাশি গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ইউনিট সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্র থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তৃণমূলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে পরস্পর বিরোধী দুটি ধারার বিরোধ আরও জোরালো হয়। দুটি ধারার একটির নেতৃত্বে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন আছেন। আরেকটি ধারা প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিউদ্দিনপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাদের সঙ্গে আছেন।
ইউনিট সম্মেলনের শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, মাহতাব-নাছিরের একক কর্তৃত্ব ও ইচ্ছায় তৃণমূলে সম্মেলন হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিটে মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কৌশলে সদস্য করা হয়নি। তাদের বাদ দিয়েই সম্মেলন করে এক নেতার অনুসারীদের মাধ্যমে কমিটি করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনের আগে সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি তথ্য বিবরণী ফরম সরবরাহ করা হয়। সেটি নিয়েও আপত্তি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মাহতাব-নাছিরের বিরোধী বলয়ের চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ্য নেতারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়ে ইউনিট সম্মেলন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেন। এরপরই কেন্দ্রীয় নেতারা ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অভিযোগ জানানো নেতারা চট্টগ্রামে কয়েক দফা বৈঠক করে তাদের করণীয় নির্ধারণ করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা গত ১৬ জানুয়ারি জ্যেষ্ঠ্য নেতাদের ঢাকায় ডেকে বৈঠক করেন।
বৈঠকে ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া ইউনিট সম্মেলন এবং দলের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো পর্যালোচনার জন্য ছয় সদস্যের একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগ যাচাইবাছাই করে কেন্দ্রের কাছে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়।
এছাড়া রিভিউ কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক থানার জন্য নগর কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে একটি করে টিম গঠনের জন্য বলা হয়, যারা থানা এবং ওয়ার্ডে সম্মেলনের সম্ভাব্যতা ও বিভিন্ন অভিযোগ যাচাইবাছাই করে রিভিউ কমিটির কাছে প্রতিবেদন দেবে।
সারাবাংলা/আরডি/একে