Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উদ্বেগজনক বায়ু দূষণ পরিস্থিতি প্রতিরোধে ১৫ সুপারিশ বাপার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৫১

ঢাকা: বায়ু দূষণে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে পরিবেশ অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে বায়ু দূষণজনিত রোগে মারা গেছে প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষ। কেবল ঢাকাতেই বায়ু দূষণের কারণে বছরে প্রাণ হারায় ১০ হাজার মানুষ।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাপা এসব তথ্য তুলে ধরেছে। ঢাকায় বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ু দূষণ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দ্য ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতিবছর বসবাসের অযোগ্য শহরগুলের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় বসবাস অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের সবশেষ প্রতিবেদনে বায়ু দূষণের দিক দিয়ে ২০২০ ও ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এই তালিকায় বিশ্বের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন থেকে বায়ু দূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলোর পাঁচটি স্বল্প মেয়াদে, পাঁচটি মধ্য মেয়াদে এবং পাঁচটি দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের উপযোগী বলে জানানো হয়েছে।

স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশগুলো হলো— শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদফরের সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে; নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণস্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে; রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে; অবৈধ ইটভাটা গুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে; এবং ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে।

বায়ু দূষণ রোধে বাপার সুপারিশ করা মধ্য মেয়াদি পদক্ষেপগুলো হলো— সরকারি ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে; ঢাকার আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে; আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে; আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে স্যান্ড ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে; এবং সিটি গভর্ন্যান্স প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে, সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে শেষ করতে হবে।

বাপা’র সুপারিশ করা দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপগুলো হলো— নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যত দ্রুতসম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে; পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে; নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর অধীনে আনতে হবে, বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে; সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে; ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে; এবং পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস ও পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। তারই সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক এবং স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাপা নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা, ক্যাপসের গবেষণা শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নাঈম এবং যুব বাপার সদস্য সচিব রাওমান স্মিতাসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

বাপা বায়ু দূষণ বায়ু দূষণ প্রতিরোধ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর