উদ্ভাবনী প্রকল্পে পানি সংকটের সমাধান পেল দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম
২৯ জানুয়ারি ২০২২ ১০:০৫
খাগড়াছড়ি: নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি জেলার যেদিকে চোখ যায়, কেবল সবুজের সমাবেশ। তবে ভূপ্রাকৃতিক গঠন আর সব পার্বত্য এলাকার মতোই পাথুরে। ফলে অনেক গ্রামেই পানির স্তর পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে, পাহাড়ের এসব গ্রামে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে পাম্প বসিয়েও পানি তোলার সুযোগ নেই। ফলে পানির সংকট পাহাড়ি অনেক গ্রামেরই নিত্যসঙ্গী। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এই সংকট তীব্রতম হয়ে ওঠে।
শেষ পর্যন্ত সরকারের হাতে নেওয়া এক উদ্ভাবনী প্রকল্পে পাহাড়ি এসব গ্রামের পানির সংকটের সমাধান মিলেছে। সেই প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাকৃতিক ঝিরিকে। এই ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পাহাড়ের দুর্গম গ্রামগুলোতে। এর জন্য লাগছে না এরপর কোনো ধরনের যন্ত্রচালিত প্রযুক্তির সহায়তা।
জেলার দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম ১০ পাহাড়ি গ্রামে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় এভাবেই নিরসন করা হয়েছে পানির সংকট। দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি দূর হয়ে এখন পাড়াগুলোতে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে পানি। তাতে স্থানীয়রা ভীষণ খুশি।
শালুয়া কার্বারী পাড়া, নারাইছড়ি এলাকার সুমন চাকমা, রত্না চাকমা ও সেবিকা চাকমা বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পানি সমস্যার কিছুটা সমাধান পাওয়া যেত। কিন্তু শীতকালে পানি সংকটের কোনো সমাধান ছিল না আমাদের কাছে। পানির জন্য সারাবছরেই কষ্ট করতে হতো। এখন পাহাড়ি ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এতে এলাকাবাসীর পানির কষ্ট দূর হয়েছে।
দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বেগিন চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, বাবুছড়া ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা দুর্গম। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, কোনো নলকূপও নেই। নলকূপ বসানোর সুযোগও নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় করে পাহাড়ি এসব এলাকায় অগ্রধিকারভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ, পাইপ ও ট্যাংক স্থাপন মিলিয়ে আড়াই লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।
তিনি আর বলেন, স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি পানির উৎসস্থলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এরপর পাইপের মাধ্যমে পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে গ্রামগুলোতে। ফলে আগে পানির কষ্ট থাকলেও এখন সবাই পানি পাচ্ছে। স্থানীয়দের দুর্ভোগ দূর হয়েছে।
খাগড়াছড়ি এলজিএসপি প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর অরুণদর্শী চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ নেই। পাথুরে এলাকা হওয়ায় নলকূপ বা অন্যান্য টিউবওয়েল বসানো সম্ভব নয়। এলাকার লোকজন পাহাড়ে অসংখ্যা ঝিরি-ঝরনা থেকে পানি নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ সারত। কিন্তু বাড়ি থেকে এসব ঝিরি বা ঝরনা অনেক দূরে থাকায় তাদের পানি সংগ্রহে ভীষণ কষ্ট হতো।
তিনি বলেন, বর্ষাকালে তবু বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সংকট কিছুটা মোকাবিলা করা যেত। কিন্তু শীত মৌসুমে এই সংকট তীব্র হয়ে উঠত। তাদের তাদের পানি সংকটের সমাধানে ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে স্থায়ীভাবে পাড়াবাসীর পানির কষ্ট দূর করার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প খুব ভালো কাজ করছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস সরাবাংলাকে বলেন, যেসব এলাকায় নলকূপ ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেসব এলাকায় প্রাকৃতি ঝিরিকে কাজে লাগিয়ে পানি সংকটের সমাধান করার জন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় পানি সরবরাহ হওয়ায় ১০ হাজার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে।
তবে পানির উৎস টিকিয়ে রাখতে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণের জন্য এলাকাবাসীর ভূমিকা রাখার ওপরও জোর দেন জেলা প্রশাসক।
সারাবাংলা/টিআরড
খাগড়াছড়ি ঝিরির পানিতে সংকটের সমাধান দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম পানি সংকট পানি সংকটের সমাধান