৯৯তম সপ্তাহে এসে দেশে করোনা সংক্রমণের নতুন রেকর্ড
৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১১:০৬
ঢাকা: দেশে জানুয়ারি মাসে সংগ্রহ করা নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ৯০ দশমিক ২৪ শতাংশেই মিলেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে বেড়েছে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যাও। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত কেটে গেছে ৯৯ সপ্তাহ। এরমধ্যে ৯৯তম সপ্তাহে দেশে তিন লাখ ৮ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৮ হাজার ৯১৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সাপ্তাহিক হিসেবে এটি বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ সংখ্যা।
এর আগে সংক্রমণের ৭৩তম সপ্তাহ অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশে ৯৬ হাজার ১৪০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা এখন পর্যন্ত সাতদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবিরের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৩৭৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৩১৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয়।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরুর দিকে এই ভাইরাসের সংক্রমণের গতি ছিল একেবারেই ধীর। যত সময় পার হয়েছে, ততই বেড়েছে সংক্রমণের গতি। ৮ মার্চ যে প্রথম তিন জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়, ওই দিন থেকে হিসাব করলে প্রথম সপ্তাহে (৮ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ) আর কারও শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়নি। এরপর দ্বিতীয় সপ্তাহের ঠিক প্রথম দিন, ১৫ মার্চ গিয়ে করোনা পজিটিভ হন আরও দু’জন। ওই সপ্তাহে (১৫ মার্চ থেকে ২১ মার্চ) মোট ২১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপরে ধীরে ধীরে দেশে বাড়তে থাকে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা।
দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২২ সালের ২৩ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সাতদিনে। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পরে এই সাতদিনে অর্থাৎ ৯৯তম সপ্তাহে দেশে তিন লাখ ৮ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৮ হাজার ৯১৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ০৯ শতাংশ। এই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় ১২০ জন যা সাপ্তাহিক হিসেবে সর্বোচ্চ।
দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২১ সালের ২৫ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাতদিনে। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পরে এই সাতদিনে অর্থাৎ ৭৩তম সপ্তাহে দেশে তিন লাখ ২৩ হাজার ২০০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৬ হাজার ১৪০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় এক হাজার ৬৩৯ জন যা সাপ্তাহিক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত সাতদিনে। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পরে এই সাতদিনে অর্থাৎ ৭৪তম সপ্তাহে দেশে তিন লাখ ৩৪ হাজার ৫১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৩ হাজার ৯১২ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। এই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় এক হাজার ৭২৬ জন যা সাপ্তাহিক হিসেবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।
দেশে চতুর্থ সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২১ সালের ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত সাতদিনে। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পরে এই সাতদিনে অর্থাৎ ৭১ তম সপ্তাহে দেশে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪২৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮৩ হাজার ৯৬ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ২২ শতাংশ। এই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় এক হাজার ৪৮০ জন যা সাপ্তাহিক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
দেশে পঞ্চম সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২১ সালের ৪ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত সাতদিনে। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পরে এই সাতদিনে অর্থাৎ ৭০ তম সপ্তাহে দেশে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৪৭১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৩ হাজার ৫৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় এক হাজার ২৭৭ জন।
দেশে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২১ সালেরই ৮ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সাতদিনে। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পরে এই সাতদিনে অর্থাৎ ৭৫ তম সপ্তাহে দেশে তিন লাখ ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬৮ হাজার ৮২২ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় এক হাজার ৫৭৭ জন।
দেশে সপ্তম সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২২ সালের ১৬ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সাতদিনে। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পরে এই সাতদিনে অর্থাৎ ৯৮ তম সপ্তাহে দেশে দুই লাখ ৪৯ হাজার ৯০৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬১ হাজার ৭৪১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে এই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৭৩ জন।
জানুয়ারিতে সংক্রমণের হার অতীতের চেয়েও বেশি
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে তিন সপ্তাহের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই সময়ে দেশে সংক্রমণ বেড়েছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সংক্রমণ শনাক্তের ৯৫তম সপ্তাহ অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে দুই হাজার ৯২৪ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ সময় সাপ্তাহিক সংক্রমণ শনাক্তের দৈনিক হার ছিল দুই দশমিক ২৪ শতাংশ। এর আগের ১০ সপ্তাহ অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে সাপ্তাহিক সংক্রমণের দৈনিক হার ছিল দুই শতাংশের নিচে।
২ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি অর্থাৎ ৯৬তম সপ্তাহে দেশে ছয় হাজার ৩০০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৯৫তম সপ্তাহের চাইতে ৪৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। ৯ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি অর্থাৎ ৯৭তম সপ্তাহে দেশে ২০ হাজার ২৮০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৯৬তম সপ্তাহের চাইতে ৩১ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি।
১৬ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি অর্থাৎ ৯৮তম সপ্তাহে দেশে ৬১ হাজার ৭৪১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৯৭তম সপ্তাহের চাইতে ৩২ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের ১০ গুণ বেশি সংক্রমণ শনাক্ত বেড়েছে ১৬ থেকে ২২ জানুয়ারিতে।
২২ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি অর্থাৎ ৯৯তম সপ্তাহে দেশে ৯৮ হাজার ৯১৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ৯৮তম সপ্তাহের চাইতে ৬২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
বেড়েছে নমুনা পরীক্ষা
দেশে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে ৯৯তম সপ্তাহে অর্থাৎ ২৩ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ে দেশে তিন লাখ আট হাজার ৯০৬ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই সপ্তাহে এক দিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ৪৯২টি। ২৫ জানুয়ারি এই নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এর আগে, সর্বশেষ দুই লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৭৭তম সপ্তাহে অর্থাৎ ২২ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে।
পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ?
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়বেই। আর তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। সংক্রমণের উৎস ও উৎপত্তিস্থল বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যায় যে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তা আশঙ্কাজনক। ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি। বর্তমানে সরকার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে। এটি কতটুকু কার্যকর হলো, সেটি জানতে হলে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। ওই সময়ে গিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসতে শুরু করলে বোঝা যাবে যে এসব বিধিনিষেধ কাজ করেছে। নইলে বিকল্প ভাবতে হবে সরকারকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ভ্যারিয়েন্ট যাই আসুক না কেন, ভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে হলে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। একইসঙ্গে হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে। মাস্ক না পরে যদি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কেউ দুশ্চিন্তা করে, তবে লাভ কী! কেউ যদি ভাইরাসকে নিজের কাছে প্রবেশের সুযোগ না দেয়, তাহলে ভাইরাসের পক্ষে কাউকে আক্রান্ত করা সম্ভব না। সে কারণেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। একইসঙ্গে ভ্যাকসিন নিতে হবে। ভ্যাকসিন একদিকে যেমন সংক্রমণের ঝুঁকি কমাবে, অন্যদিকে সংক্রমিতদের হাসপাতালে যাওয়ার সংখ্যাও কমাবে।’
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতেই হবে
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণেই মূলত সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে সংক্রমণ বাড়িয়েছে, একই ধরনের প্রবণতা বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে। কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘোষণাই বলছে, দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এরই মধ্যে ঘটে গেছে। এ বছর করোনাভাইরাসের যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার সিংহভাগেও মিলেছে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি।
ওমিক্রনের প্রভাবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কত দিন থাকবে, সে বিষয়ে অবশ্য এখনই কিছু বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রভাব যাই থাকুক, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দিকে সরকারকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। বলছেন, সংকটের এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একেবারেই বাইরে চলে যাবে, যার জন্য ভুগতে হবে দীর্ঘ সময়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না কিংবা কবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে— এসব বিষয়ে বলার মতো যথেষ্ট তথ্য এখনো কারও কাছেই নেই। আমাদের দেশেও এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আরও কমপক্ষে দুই থেকে তিন সপ্তাহ চলতে পারে। সবাই গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে এরপর হয়তো সপ্তাহখানেক স্থিতাবস্থা থাকবে। তারপর সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে পারে।
তবে স্বাস্থ্যবিধি বা বিধিনিষেধ নিয়ে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল। তিনি বলেন, সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছে। কিন্তু সেগুলো কার্যকর করতে প্রশাসন কী করছে? সরকার নির্দেশনা দিলেও প্রশাসনের তেমন তৎপরতা দেখছি না। স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্ব সরকারের একার নয়, এর সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। সেটিই হচ্ছে না। সেটি করার পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এক লাখ হলে ভালো হতো। বাড়তি জনবল নিয়োগ দিয়ে হলেও এই কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে।
ওমিক্রনের প্রভাবে সারাবিশ্বেই করোনা সংক্রমণের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশেও দুয়েকদিনের মধ্যে হয়তো সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষায় সেখানে ১৫ হাজারের বেশি শনাক্ত হচ্ছে, ১ লাখ নমুনা পরীক্ষা হলে তো এই সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
তবে সংক্রমণের সংখ্যায় মনোযোগ না দিয়ে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী হতে আহ্বান জানালেন ডা. মুশতাক। তিনি বলেন, যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে হবে। পরীক্ষা করার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা আক্রান্তদের ফলোআপের আওতায় আনতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে আইসোলেশন সেন্টার করতে হবে। এসব না করতে পারলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কোথায় গিয়ে থামবে, বলা মুশকিল।
সারাবাংলা/এসবি/এএম