Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মির্জা আজমের বক্তব্যের প্রতিবাদ চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের ৪ সংগঠনের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:২০

ঢাকা: চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের নিয়ে দেওয়া সংসদ সদস্য মির্জা আজমের একটি বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে পেশাজীবী চারটি সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বেসরকারি সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস এন্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ’ (এফডিএসআর), বাংলাদেশের প্রকৌশল পেশাজীবীদের জাতীয় সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ)। সংগঠনগুলো পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মির্জা আজমের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আইইবি আগামী ৩ দিনের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। প্রকৌশলীদের সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদার সভাপতিত্বে নির্বাহী কমিটির ৭২৯তম সভায় জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের বক্তব্যের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় আইইবি’র পক্ষ থেকে মির্জা আজমের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকদের সংগঠন এফডিএসআর-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের সম্মানিত সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপির ভাইরাল হওয়া একটি বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে, যেখানে তিনি ইঞ্জিনিয়ারদের ফার্স্ট ক্লাস চোর এবং ডাক্তারদের সেকেন্ড ক্লাস চোর বলে অভিহিত করেছেন।’

সংগঠনটির প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস এন্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ’ (এফডিএসআর) এর পক্ষ থেকে আমরা মির্জা আজমের এই অসত্য এবং মানহানিকর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছি।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ১৯শে জানুয়ারি জামালপুর জেলা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সঙ্গে এক আলােচনায় জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম বুয়েটের স্নাতক প্রকৌশলী এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের চোর সাব্যস্ত করে অত্যন্ত আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রকৌশলী ও ডাক্তারদের সম্পর্কে মির্জা আজমের এমন অবমাননাকর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়।’

মির্জা আজমের বক্তব্যকে কাণ্ডজ্ঞানহীন ও দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়,  ‘একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সংসদ সদস্য কর্তৃক যেকোনো পেশাজীবী সম্পর্কে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য অবমাননাকর ও অগ্রহণযোগ্য। তিনি মেধাবীদের সম্পর্কে যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কাণ্ডজ্ঞানহীন ও দুর্ভাগ্যজনক।’

মির্জা আজমের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়ে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) এর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম তার এক সাম্প্রতিক বক্তব্যে চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সামগ্রিকভাবে ‘চোর’ বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমরা মির্জা আজমের এই অসত্য এবং মানহানিকর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।’

এতে আরও বলা হয়, ‘বিডিএফ আশা করে, এই অসত্য মানহানিকর, বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসক ও প্রকৌশলী- এই দুটি মহান পেশাজীবী সমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন, ক্ষমা চাইবেন এবং বক্তব্যটি প্রত্যাহার করবেন।’

এ বিষয়ে জানতে সারাবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের সঙ্গে। তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন মির্জা আজম।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০-২৫ দিন আগে দেওয়া একটি বক্তব্য বিকৃত করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। সেদিন আমার নির্বাচনি এলাকার বেসরকারি ক্লিনিক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ দেখা করার জন্য এসেছিল। তারা জানায় ক্লিনিক বন্ধ করে দিতে হবে কারণ তাদের নাকি সরকারি ডাক্তাররা সময় দিতে পারে না। আমি তখন বলি, সরকারি ডাক্তার তো এমনেই আমার এলাকায় কম আছে, তার উপরে আবার কিভাবে বেসরকারিতে কাজ করবে? যারা সরকারিভাবে আছে তাদের মাঝেও অনেকে বিভিন্ন স্থানে এটাচমেন্টে আছে। এমন সংকটে যদি বেসরকারিতে তারা দায়িত্ব পালন করে তবে সেটা তো নৈতিক হবে না। আমাদের আসলে সামাজিকভাবে অনেক অবক্ষয় ঘটেছে আর তাই এমনটা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এর পরেই কিছু বক্তব্য দেই বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তির প্রেক্ষাপটে যেখানে তিনি বলেছিলেন, আমাদের দেশের কৃষক বা খেটে খাওয়া মানুষেরা কিন্তু চুরি করে না।’ আসলেই তো তাই। এখন তাদের যারা সেবা দেয় তাদের কী অবস্থা তবে? দেখা গেল জনবল নেই।’

মির্জা আজম তার মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কারো সন্তান যদি বুয়েট বা মেডিকেলে পড়ে তবে তাদের রত্নগর্ভা বলা হয়। কিন্তু সেখান থেকে পাশ করার পরে একজন ইঞ্জিনিয়ার যখন উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগ পান তখন তার প্রথম মাসের বেতন হওয়ার আগেই কমিশনের টাকা পৌঁছে যায় ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে। আর এটাই বাস্তবতা।’

মির্জা আজম বলেন, ‘যদি কেউ সৎভাবে কাজ করতে চায় তবে তাকে সেখানে টিকতে দেওয়া হয় না। কারণ আমাদের সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। যেখানে স্থানীয় পর্যায়ের চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রতিটা পর্যায়ে আসলে দুর্নীতিটাকেই স্বাভাবিকভাবে দেখা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডাক্তার সংকট তো সবসময়েই। সেখানে যারা কাজ করছেন তারা যদি সেই একই সময়ে বেসরকারি ক্লিনিকে যান তবে নাগরিকরা সেবা পাবেন কিভাবে?’

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তার বক্তব্য সম্পূর্ণ নয় নয় দাবি করে মির্জা আজম বলেন, ‘বক্তব্যের শুরু ও শেষ ভাগের কোনো কিছু প্রচার না করে মাঝখানে কিছু অংশ দেওয়া বিভ্রান্তিকর। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করি না। তাই জানি না কী হয়েছে। কিন্তু যেভাবে ঢাকা মেডিকেল বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা বিকৃত বক্তব্য শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বলে শুনেছি তা আসলে ঠিক হচ্ছে না।’

‘আশা করছি তারা পুরো বক্তব্য শুনে পেশাগতভাবে নয় বরং বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই আমার কথাগুলো বিবেচনা করবেন’— বলেন করেন মির্জা আজম।

সারাবাংলা/এসবি/আইই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর