চিকিৎসক ও প্রকৌশলী সমাজকে হেয় করেছেন মির্জা আজম: বিএমএ
৩০ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৩৯
ঢাকা: জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের বক্তব্যে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের ‘চোর হিসেবে’ আখ্যায়িত করার প্রতিবাদ জানিয়েছে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
সংগঠনটির দাবি, চিকিৎসক সমাজকে হেয় করেছেন মির্জা আজম। চিকিৎসকদের নিয়ে দেওয়া বক্তব্যে অশালীন, আপত্তিকর, মানহানিকর, কল্পনাপ্রসূত ও অবমাননাকর উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯ জানুয়ারি জামালপুরের একটি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য মির্জা আজমের একটি বক্তব্য চিকিৎসক সমাজের গোচর হয়েছে। সভায় তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের চোর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার এই বক্তব্য অশালীন, আপত্তিকর, মানহানিকর, কল্পনাপ্রসূত ও অবমাননাকর। আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য ওই যুদ্ধে সম্মুখ সমরে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক সমাজকে হেয় করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ দেশের ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ভোট ও ভাতের অধিকার আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে চিকিৎসক সমাজের অবদান সর্বজনবিদিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এখন পর্যন্ত যত অর্জন, সবই সম্ভব হয়েছে দেশের চিকিৎসক সমাজ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অসাধারণ কৃতিত্বে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ৫০ বছরে একমাত্র দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০টি প্রশংসামূলক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সমসাময়িক সময়ে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে প্রায় ১২ জন চিকিৎসক এবং বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় ১৯০ জন চিকিৎসক শহিদ হয়েছেন। প্রায় তিন হাজারেরও বেশি চিকিৎসকসহ প্রায় ৯ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের প্রায় সবার পরিবারের সদস্য তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন কিংবা প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নাল ল্যানসেট যখন তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন, সেখানে একজন রাজনীতিবিদ অর্বাচীনের মতো চিকিৎসকদের সব অর্জনকে খাটো করে তাদের চোর বলে বক্তৃতার মঞ্চে শিহরণ তৈরি করেন। এটি কেবলমাত্র অসৎ রাজনীতিবিদের পক্ষেই সম্ভব।
আমরা মনে করি এভাবে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে ওই রাজনীতিবিদ নিশ্চয় ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান— উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
মির্জা আজমের বক্তব্যে প্রকৌশলীদের প্রসঙ্গও উঠে আসে। বলা হয়, অর্থনীতি ও উন্নয়নের চাকাকে ক্রমাগতভাবে এমনকি মহামারির সময়েও সচল রাখতে এ দেশের প্রকৌশলীরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রকৌশলী-চিকিৎসকদের কটূক্তি করে মির্জা আজম যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন, তা নজিরবিহীন।
অসত্য তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াসে তিনি সংসদ সদস্য হিসাবে শপথভঙ্গ করেছেন জানিয়ে প্রতিবাদে বলা হয়, আমরা এই সংসদ সদস্যের দায়িত্বহীন বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা সরকারপ্রধান তথা এ দেশের সব মানুষের আস্থার জায়গা প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এর আগে, জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জামালপুর জেলা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন মির্জা আজম।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর