Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছরের প্রথম মাসেই কারাগারে ৫ মৃত্যু, র‍্যাব ও পুলিশি হেফাজতে ২

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৩৫

ঢাকা: গত বছরের মতো এ বছরেও কারা হেফাজত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে কারা হেফাজতে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে দুইটি মৃত্যুর তথ্যও জানিয়েছে সংগঠনটি।

এমএসএফের মাসিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের মানবাধিকার জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১২টি জাতীয় দৈনিক ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও মানবাধিকারকর্মীদের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ করা হয়েছে।

কারা হেফাজতে ৫ মৃত্যু

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বলছে, ২২ জানুয়ারি জামালপুর জেলা কারাগারে শাকিল মাহমুদ জিসান (২৬) অসুস্থ বোধ করেন। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

২৫ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলা কারাগারে চেক জালিয়াতি মামলায় দেড় বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি সফিকুল ইসলামের (৫০) মৃত্যু হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় টয়লেটে গিয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে টয়লেট থেকে তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই দিনই (২৫ জানুয়ারি) সকালে পাবনা কারাগারে অসুস্থতা বোধ করলে কয়েদি হাতেম আলী প্রামাণিককে (৬০) জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মৃত্যু হয় তার।

একই দিন সকালে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের হাজতি রেজাউল করিম (৫০) অসুস্থ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

৩০ জানুয়ারি ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের কপোতাক্ষ ওয়ার্ডের ৩ নম্বর সেলের শৌচাগার থেকে মফিজ উদ্দিন (৩৬) নামে এক কয়েদির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

এমএসএফ কর্তৃপক্ষ বলছে, কারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর পাশপাশি বেশকিছু অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। দুদকের একটি টিম কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পান, কারা হাসপাতালে নিজস্ব কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। একজন চিকিৎসক প্রেষণে কর্মরত আছেন। হাসপাতালটি উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে না। কারা অভ্যান্তরে কারাবন্দিরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার বিষয়টিও সামনে এসেছে। কারাগারের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাগুলো যথাযথ তদন্ত করা আবশ্যক বলে এমএসএফ মনে করে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ২ মৃত্যু

জানুয়ারি মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব কাদমা মালদাপাড়া গ্রামে স্ত্রী সাবিত্রী রানীর (৩০) মৃত্যুর কারণে হাতিবান্ধা থানা পুলিশ স্বামী হিমাংশু রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ৭ জানুয়ারি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিকেলে হিমাংশুর মৃত্যু হয়।

পুলিশের ভাষ্য, জিজ্ঞাসাবাদের ফাঁকে হিমাংশুকে থানার নারী-শিশু হেল্প ডেস্ক কক্ষে নিয়ে কর্মকর্তারা খেতে দেন। এ সুযোগে সেখানে থাকা ওয়াই-ফাইয়ের তার গলায় পেঁচিয়ে জানালার গ্রিলে ঝুলে হিমাংশু আত্মহত্যা করেন।

এদিকে, গাজীপুরের টঙ্গীতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নির্যাতনে আসাদ শেখ (৪০) নামে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আসাদ শেখের পরিবারের অভিযোগ, ১ জানুয়ারি দুপুরে মাদক কারবারের অভিযোগে র‌্যাবের কমপক্ষে ১০ জন সদস্য তাদের বাসায় তল্লাশি চালান। এ সময় তারা আসাদ শেখকে মারধর করেন। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিকেলে টঙ্গীর শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। র‍্যাব অবশ্য পরিবারের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

‘বন্দুকযুদ্ধ’, অপহরণ ও দমনমূলক আচরণ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফের সংগ্রহ করা তথ্য বলছে, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীতে ১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মাদক কারবারিদের সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটেছে। কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বিজিবি দুই লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে।

অন্যদিকে ১১ জানুয়ারি নওগাঁর নিয়ামতপুরে একটি মোটরসাইকেলে করে আসা র‌্যাবের পোশাক পরা দুই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানকে হাতকড়া লাগিয়ে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যান। পরে অপহৃত হাবিবুরকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর এলাকার একটি আমবাগান থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। সংবাদসূত্রে জানা যায়, ভুয়া র‌্যাব সেজে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্রে এমএসএফ বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিগত সময়ে গুমের শিকার হওয়া বেশ কয়েকটি পরিবারের স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে অথবা পরিবারের সদস্যদের থানায় এনে জোর করে সাদা কাগজে সই নেওয়ার জন্য চাপ তৈরি ও হয়রানি করেছেন। এমএসএফ মনে করে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে কিংবা তাদের থানায় নিয়ে সাদা কাগজে জোর করে সই করানোসহ বিভিন্নভাবে হয়রানিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে যা অন্যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন যার মাধ্যমে ন্যায়বিচার না পাওয়ার পরিস্থিতির ক্রমবর্মান অবক্ষয়ের চিত্রটি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এর ফলে নাগরিক জীবনে চরম উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে। তাতে করে ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতা জন্ম নিচ্ছে।

এদিকে, ১৬ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত ছাত্রদের জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীসহ আহত হন অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি। বিনা উসকানিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের এ ধরনের হামলা ও অন্যদিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ শিক্ষার্থীদেরকে চরম সংকটের মধ্যে ফেলে বলে মনে করছে এমএসএফ।

এছাড়া, ২৪ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করার ‘অভিযোগে’ শাবিপ্রবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কোনো ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তুলে নিয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়।এ ঘটনারও নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের অযাচিত পদক্ষেপ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয় এবং এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না বলে মনে করছে সংস্থাটি।

জানুয়ারিতে চাকরির বয়সসীমা বাড়াতে সর্বদলীয় ছাত্র-ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সাথে সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে সেখান থেকে রমনা থানা পুলিশ ২০ জনকে আটক করে রমনা থানায় নিয়ে যায় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে এমএসএফ। সংস্থাটি বলছে, তিন ঘণ্টা আটক রেখে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, তাদের থানায় মারধর করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মন্ত্রীর বাসার নিচ থেকে শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়ার এ ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে এমএসএফ মনে করছে।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

এমএসএফ কারা হেফাজতে মৃত্যু কারা হেফাজতে মৃত্যু জানুয়ারি ২০২২ টপ নিউজ মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর