৪৫ শিশু-কিশোরীসহ জানুয়ারি মাসে ৬৫ ধর্ষণ
৩১ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৪৪
ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৬৫টি। এর মধ্যে ৪৫টি ঘটনাতেই ধর্ষণের শিকার শিশু ও কিশোরী। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ঘটেছে ১২টি, হত্যার ঘটনা ঘটেছে তিনটি। এছাড়াও ছয় প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে মোট ৩২৫টি।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) জানুয়ারি মাসের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার এ চিত্র তুলে ধরেছে। ১২টি জাতীয় দৈনিক ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের পাশাপাশি মানবাধিকারকর্মীদের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করে তারা জানুয়ারি মাসের মাসিক এই মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এমএসএফের প্রতিবেদন বলছে, নির্যাতনের শিকার ৩২৫ নারী ও শিশুর মধ্যে ৪৫টি শিশু ও কিশোরীসহ মোট ধর্ষণের শিকার ৬৫। অন্যদিকে দলবেঁধে ধর্ষণের সাতটি ঘটনাতেই শিকার শিশু ও কিশোরী। ধর্ষণচেষ্টার শিকারের মধ্যেও রয়েছে ১৩টি শিশু-কিশোরী। অন্যদিকে যৌন হয়রানির শিকার যারা, তাদের মধ্যে শিশু-কিশোর পাঁচটি, নারী ছয় জন।
জানুয়ারি মাসে শারীরিক নির্যাতনের ৩৯টি ঘটনায় ১২টির শিকার শিশু-কিশোরী। এই সময়ে ১৭টি কিশোরীসহ মোট ৬২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। এ মাসে অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন দু’জন নারী। অপহরণের শিকার হয়েছে ১০ কিশোরী। অন্যদিকে এক জন নারী ও ১১টি শিশু-কিশোরী নিখোঁজ হয়েছে এ মাসে।
এছাড়াও জানুয়ারি মাসে ১২ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৮৬ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু-কিশোরী ১৩টি। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্যের বরাতে এমএসএফ বলছে, প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক ও প্রেমঘটিত বিষয়ের কারণে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলছে, এ মাসে অন্তত পাঁচটি ধর্ষণের ঘটনা সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁর মান্দা উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম ওরফে সুটকা (৪৫) ধর্ষণ করেন। সালিস বৈঠকে আশরাফুল ধর্ষণের কথা স্বীকার করলে মাতবররা তাকে জুতাপেটা করেন এবং প্রতিবন্ধী শিশুটির চিকিৎসার জন্য আট হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি আপস করে দেন।
মাগুরার শ্রীপুরে ৯ বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয় প্রতিবেশী সনত মণ্ডলের (৪৮) কাছে। ধর্ষক সনত মন্ডল ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবে না— সালিস বৈঠকে এই মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে স্বামী-সন্তানদের হত্যার ভয় দেখিয়ে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন আলহাজ উদ্দিন (৫০)। সালিসে ৭০ হাজার টাকায় ঘটনাটির মীমাংসা করা হয়।
এছাড়া ধামরাইয়ে এক তরুণী ধর্ষণের ঘটনা পাঁচ লাখ টাকায় মীমাংসা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৪ লাখ টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে দিলেও ১ লাখ টাকা স্থানীয় মাতবররা নেন। তবে এ মীমাংসা মেনে নেয়নি ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী। ধর্ষক তাকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দেন তিনি।
এছাড়া জানুয়ারি মাসে ছয়টি মৃত ও পাঁচটি জীবিত নবজাতক শিশুকে বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এমএসএফ বলছে, এ শিশুদের কী কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা বের করার চেষ্টা করছে না। দেশে ধর্ষণ, শিশু ও নারীদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনায় সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব, বিশেষ করে সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সরকারি নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
এমএসএফ ধর্ষণ নারী ও শিশু নির্যাতন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন সংঘবদ্ধ ধর্ষণ